৬:৩৩ অপরাহ্ন

বুধবার, ৮ মে , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ৩, ২০২৩ ৭:৩২ অপরাহ্ন
ধানে চিটা হওয়ার কারণ ও সমাধান
কৃষি গবেষনা

বোরো ধান উৎপাদনে উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাব –
মার্চ মাসের ৩য় সপ্তাহ থেকে দিনের বেলার তাপমাত্রা প্রায়শই ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়েও বেড়ে যাচ্ছে। যা ধানের ফুল ফোটা পর্যায়ে চিটা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ধান গাছের জীবনচক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের তাপমাত্রায় গাছের বাড়-বাড়তি প্রভাবিত হয়। আমাদের দেশে চাষকৃত জাতসমূহ সাধারনত: ২০-৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস গড় তাপমাত্রায় বৃদ্ধি ও উন্নয়ন সবচেয়ে ভালো হয়। তাপমাত্রা এর চেয়ে উপরে বা নিচে চলে গেলে ধান গাছের বৃদ্ধি ও উন্নয়ন ব্যহত হয়।
তবে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে সাধারনত: প্রজনন পর্যায় যথাঃ শীষ গঠন ও ফুলফোটা/পরাগায়ন এবং দানা ভরাট/গঠন পর্যায়ে দিনের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা এর চেয়ে বেশী হলে ধানে চিটা সমস্যা ও দানার পুষ্টতা বাধাগ্রস্থ হয়।
ধানের বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে বৃদ্ধি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হলেও ফুলফোটা পর্যায়ে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা এর চেয়ে বেশী হলে ধানে চিটা সমস্যা দেখা দেয়।
সাধারনত: ফুলফোটা পর্যায়ে দিনের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর বেশী হলে ঐদিন যে ফুলসমূহ ফুটবে তা চিটা হয়ে যাবে এ কারনে সম্পূর্ন শীষ চিটা হবে না।
আমাদের দেশে দীর্ঘ জীবনকালের বোরো ধানের জাত সমূহ, নাবী বোরো ও আউস ধানে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে চিটা সমস্যা দেখা যায়। এছাড়াও এসময়ে চাষকৃত জাতসমূহ রাত্রীকালীন উচ্চ তাপমাত্রা এবং ঝড়ের কারণে দানার পুষ্টতা বাধাগ্রস্থ হয় ও দানা কালো বর্ণ ধারণ করে ফলে বীজ ও ধানের মান এবং ফলন কমে যায়।
উচ্চ তাপমাত্রার ক্ষয়ক্ষতি ও প্রভাবঃ
প্রজনন পর্যায়ে অতি উচ্চ তাপে (৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা এর বেশী হলে) শিষে ধানের সংখ্যা কমে যেতে পারে।
ফুল ফোটা পর্যায়ে অথবা পরাগায়ণের সময় উচ্চ তাপে (৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা এর বেশী হলে) ধানের পরাগায়ন বাধাগ্রস্থ হয় ফলে চিটার সংখ্যা বেশী হয়।
রাত্রীকালীন উচ্চ তাপমাত্রা (২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা এর বেশী হলে) ও ঝড়ের কারণে দানার পুষ্টতা বাধাগ্রস্থ হয় ও দানা কালো বর্ণ ধারণ করে।
ফুল ফোটা পর্যায়ে অথবা পরাগায়ণের সময় ইট-ভাটার আশে-পাশের জমিতে উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাবের কারণে ধানের শীষ আগুনে-ঝলসে যাওয়ার মত লক্ষণ দেখা যায় ফলে চিটার সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে যায় ও দানার পুষ্টতা বাধাগ্রস্থ হয় ও ফলন ব্যাপকহারে কমে যায়।
ক্ষয়ক্ষতি পূরণে ব্যবস্থাপনাঃ
চৈত্র ও বৈশাখ (এপ্রিল) মাসের উচ্চ তাপমাত্রা প্রাকৃতিক বিধায় প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবে বোরো ধানের জাত নির্বাচন এবং এদের বপন ও রোপন সময় সমন্বয় করে এ সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
স্বল্প জীবনকালের বোরো ধানের জাত যথা: ব্রি ধান২৮, অগ্রহায়ন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বপন এবং ৪০-৪৫ দিন বয়সের চারা রোপন করে প্রজনন ও ফুল ফোটা পর্যায়ে চৈত্র ও বৈশাখ (এপ্রিল) মাসের উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাব এড়ানো সম্ভব।
দীর্ঘ জীবনকালের বোরো ধানের জাত সমূহ যথা: ব্রি ধান২৯ ও ব্রি ধান৫৮, কার্তিক মাসের ৩য়-৪র্থ সপ্তাহের মধ্যে বপন এবং ৪০-৪৫ দিন বয়সের চারা রোপন করে প্রজনন ও ফুল ফোটা পর্যায়ে চৈত্র ও বৈশাখ (এপ্রিল) মাসের উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাব এড়ানো সম্ভব।
জমিতে সেচ প্রদান করে এবং পানি ধরে রেখে চৈত্র ও বৈশাখ মাসের উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাব কিছুটা কমানো যেতে পারে।
ধানের জমির আশে-পাশে ইট-ভাটা স্থাপনের অনুমোদন না দেওয়া অথবা ইট-ভাটার আশে-পাশে ধান চাষ না করা।
উচ্চ তাপমাত্রা সহিষ্ণু ধানের জাত চাষ করতে হবে।
এসময় করণীয়:-
ক)জমিতে পানি ধরে রাখুন।
খ) কাইচ থোর পর্যায়ে পটাশ, জিবি বোরন, মাইটিভিট, জিবি জিংক এবং কেমোজল জাতীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে পারেন।
গ) ১০লিটার পানিতে ৬০গ্রাম পটাশ সার+৬০গ্রাম মাইটিভিট একত্রে মিশিয়ে ৫শতক জমিতে স্প্রে করতে পারেন।
বিস্তারিত পরামর্শের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসারের কার্যালয়ে অথবা ইউনিয়ন/ ব্লক পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নিন।
তথ্যসূত্র :
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)

প্রকাশ : জানুয়ারী ১৭, ২০২৩ ৭:৪৭ পূর্বাহ্ন
শৈত্যপ্রবাহে বোরো ধানের বীজতলার যত্ন নিতে যা করবেন
কৃষি বিভাগ

দেশে বইছে পৌষের শীত। তবে, এ মাসের শুরুর দিকে শীতের তীব্রতা তেমন অনুভব না হলেও শেষদিকে এসে কাঁপছে গোটা দেশ, বইছে শৈত্যপ্রবাহ। এ সময়ে অনেকে বোরো ধানের জন্য তৈরি করছেন বীজতলা। আর এ বীজতলার যত্ন কীভাবে নেবেন বা কোন প্রযুক্তি সুবিধাজনক হবে চাষিদের সেই পরামর্শ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস)।

এআইএস বলছে, শৈত্যপ্রবাহের কারণে বোরো ধানের চারা চারা হলুদাভ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া শীতের প্রকোপে চারা পোড়া বা চারা ঝলসানো রোগের জন্য চারা মারা যেতে পারে। শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে কৃষক ভাইদের বোরো ধান চাষাবাদে বাড়তি কিছু যত্ন নেওয়া জরুরি।

বোরো ধানের বীজতলা তৈরিতে করণীয়
* শৈত্যপ্রবাহের সময় বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢেকে দিতে হবে। তবে, দীর্ঘসময় ধরে শৈত্যপ্রবাহ চলতে থাকলে সেখানে দিনে এবং রাতে সবসময় পলিথিন দিয়ে চারা ঢেকে রাখতে হবে এবং বীজতলার উভয়পার্শ্বে পলিথিন আংশিক খোলা রাখতে হবে।

* বীজতলায় ৩ থেকে ৫ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে নলকূপের পানি ব্যবহার করা ভালো। বীজতলায় পানি সকালে বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দিতে হবে। প্রতিদিন সকালে জমা করা শিশির ঝরিয়ে দিতে হবে। ধান-চাষ কৃষি-সংবাদ

* চারা পোড়া বা কলসানো রোগ দমনের জন্য রোগের প্রাথমিক অবস্থায় প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলিলিটার অ্যাজোস্কিস্ট্রোবিন বা পাইরাক্লোস্টবিন জাতীয় ছত্রাকনাশক মিশিয়ে বীজতলায় বিকেলে স্প্রে করতে হবে।

* বীজতলায় চারা হলুদ হয়ে গেলে প্রতি শতক জমিতে ২৮০ গ্রাম হারে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া প্রয়োগের পরও চারা সবুজ না হলে প্রতি শতক জমিতে ৪০০ গ্রাম হারে জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে।

* জমিতে রোপণের জন্য কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪৫ দিনের চারা ব্যবহার করতে হবে। এ বয়সের চারা রোপণ করলে শীতে ভারার মৃত্যুর হার কমে।

* চারা রোপণকালে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে কয়েকদিন দেরি করে তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলে চারা রোপণ করতে হবে।

* রোপণের পর শৈত্যপ্রবাহ হলে জমিতে ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখতে হবে। শীতের তীব্রতা ও বয়স বিবেচনা করে চারা রোপণ করলে চারা সতেজ থাকবে এবং অধিক ফলন পাওয়া যাবে।

প্রকাশ : জানুয়ারী ১৩, ২০২৩ ৮:২৩ অপরাহ্ন
টুঙ্গিপাড়ায় ১৫০ বিঘা জমিতে সমলয়ে ধান চাষ শুরু
কৃষি বিভাগ

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যান্ত্রিকীকরণ ও অধুনিক চাষাবাদের মাধ্যমে দেড় শ’ বিঘা জমিতে সমলয়ে বোরো ধানের চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এ পদ্ধতির চাষাবাদে বীজতলা থেকে শুরু করে ধান মাড়াই পর্যন্ত যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। এ চাষাবাদে কম খরচে কৃষক অধিক ধান উৎপাদন করতে পারবেন।ধানের অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হবেন। এ চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশ খাদ্য উৎপাদনে আরো সমৃদ্ধ হবে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

শুক্রবার সকালে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কুশলী গ্রামে সমালয়ে চাষাবাদের উদ্বোধন করে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপজেলা ভাইস চেয়ার অসীম কুমার বিশ^াসসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন।

টুঙ্গিাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, সমলয়ে চাষাবাদে আমরা রামচন্দ্রপুর গ্রামের ৪৮ জন কৃষককে সম্পৃক্ত করেছি। তাদের জমিতে এ পদ্ধতির চাষাবাদ হচ্ছে। চাষাবাদের শুরুতে আমরা ট্রেতে বীজতলা করেছি। প্রতি বিঘায় প্রচলিত চাষাবাদে হাইব্রিড ধানবীজ ৪ কেজি ও উফশী ধানবীজ ৮কেজি দিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হয়। সেখানে সমলয়ে চাষাবাদে বিঘা প্রতি বীজ খরচ অর্ধেক হয়েছে। বীজে কৃষকের খরচ বেঁচেছে। এ চাষাবাদে রাইসট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। এতে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ২০০ টাকা। শ্রমিক দিয়ে ধান রোপণ করতে গেলে অন্তত ৬ হাজার টাকা খরচ হত। এছাড়া উইডার মেশিন দিয়ে নিড়ানী দেওয়া হবে। এতে মাত্র ২জন শ্রমিক প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে অন্তত ১০জন শ্রমিকের মজুরী সাশ্রয় হবে। এ ধান পাকার পর কম্বাইন্ড হারভে স্টার দিয়ে কেটে মাড়াই করে দেওয়া হবে। এ মেশিন দিয়ে ১ বিঘা জমির ধান কাটতে মাত্র ১হাজার ৫০০ টাকা ব্যয় হবে। এতে সাশ্রয় হবে অন্তত সাড়ে ৭ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এ পদ্ধতির চাষাবাদে কৃষকের বিঘা প্রতি অন্তত ১২ হাজার টাকা সাশ্রয় হবে। এছাড়া এ পদ্ধতির চাষাবাদে বিঘা প্রতি হাইাব্রিডে ৩০ মণের স্থলে ৩৫ মণ ধান উৎপাদিত হবে। উফশী জাতে ২৫ মণের স্থলে ৩০ মণ ধান উৎপাদিত হবে। এ পদ্ধতির চাষাবাদে জমিতে কোন আইল থাকে না। এছাড়া ২০ থেকে ২২ দিন বয়সের ধানের চারা রোপণ করতে হয়। তাই ধানের উৎপাদন বেড়ে যায়।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ৮ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। এরমধ্যে আইল রয়েছে প্রায় ১২৬ হেক্টর। জমির আইল আনাবদি থাকে। সব জমিতে সমলয়ে চাষাবাদ হলে ওই জমি চাষাবাদের আওতায় আসত। এতে আরো ৭৫৬ মেট্রিক মেট্রিক টন ধান বেশি উৎপাদন হত।

এ চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশ খাদ্য উৎপাদনে আরো সমৃদ্ধ হবে বলে ওই কৃষি কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, সরকার কৃষিকে যান্ত্রীকী করণ করতে চাইছে। এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে শ্রমিক কম লাগে। এছাড়া ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় সমলয়ে চাষবাদ কার্যক্রমের আওতায় ১৫০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এ পদ্ধতির চাষাবাদে একই জাতের ফসল আবাদ করতে হয়। ধানের অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হন। এ পদ্ধতির চাষাবাদ সম্প্রসারিত হলে দেশের খাদ্য উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে।

প্রকাশ : জানুয়ারী ৪, ২০২৩ ৫:০২ অপরাহ্ন
বোরো চাষে সার প্রয়োগ করতে হবে সঠিক মাত্রায়
কৃষি বিভাগ

বোরো ধান ফসলের জন্য কৃষকদের করণীয় জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সংস্থাটি বলছে, বোরো রোপণের জমিতে প্রয়োজনীয় সার সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। কৃষকরা ধানের চারা লাইন করে রোপণ করবেন। চারা রোপণের সময় বেশি ঘন করে রোপণ না করে আট ইঞ্চি X ছয় ইঞ্চি দূরত্বে চারা রোপণ করবেন।

জমির আগাছা (ঘাস) মারার জন্য কমিট বা সুপারহিট ক্রিয়ার বা রিফিট-৫০০ইসি এর যে কোনো একটি আগাছানাশক বিঘাপ্রতি ১৩৪ এমএল হারে চারা রোপণের ছয়দিনের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে।

সারের মাত্রা: বোরোর জন্য বিঘাপ্রতি সারের প্রয়োজন ৩০-৩৫ কেজি। এছাড়া ডিএপি ১২-১৪ কেজি, এমওপি (পটাশ) ১৫-২০ কেজি, জিপসাম আট কেজি ও জিংক সালফেট এক কেজি।

কৃষি সংস্থাটি বলছে, জমিতে ইউরিয়া সার বেশি দিলে গাছের বাড়-বাড়তি বেশি হয়। গাছ হেলে পড়ে। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়। এছাড়া ফলন কমে যায়। এজন্য বিয়ার সার ব্যবহার করতে হবে।

চারা রোপণ থেকে ফসল তোলা পর্যন্ত করণীয়

১. চারা রোপণের ৪০-৫০ দিন পর্যন্ত জমি আগাছা মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করুন।

২. চারা রোপণেরে এক সপ্তাহের মধ্যেই বিঘা প্রতি চার থেকে পাঁচটি ভালো কঞ্চি পুঁতে দিন।

৩. নিয়মিত ক্ষেতে হেঁটে হেঁটে পোকামাকড়ের ও রোগবালাইয়ের আক্রমণের তীব্রতা লক্ষ্য রাখবেন।

৪. থোড় আসার সময় থেকেই আলোক ফাঁদের সাহায্যে কারেন্ট পোকার উপস্থিতি বোঝার জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার সহায়তা নিন।

৫. পোকামাকড়ের প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন বয়সে একবার ও ধানের ফুল ফোটার পরপরই দুইবার সিস্টেমিক জাতীয় কীটনাশক স্প্রে করবেন।

৬. রোগবালাই শনাক্তকরণের জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার সহায়তা নিন।

প্রকাশ : ডিসেম্বর ২৭, ২০২২ ৫:৩১ অপরাহ্ন
অনুমোদন পেল উদ্ভাবিত ধানের আরও তিনটি জাত
কৃষি গবেষনা

জাতীয় বীজবোর্ডের অনুমোদন পেল বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত আরো তিনটি নতুন ধানের জাত। গতকাল সোমবার জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৮তম সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। ব্রি উদ্ভাবিত নতুন তিনটি জাতের মধ্যে ব্রি ধান ১০৩ আমন মৌসুম, ব্রি ধান ১০৪ ও ব্রি হাইব্রিড ধান ৮ বোরো মৌসুমের জন্য অবমুক্ত করা হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় বীজ বোর্ডের সভাপতি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ধানের জাতগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখানে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীরসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) ব্রি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন উদ্ভাবিত ব্রি ধান ১০৩ আমন মৌসুমের একটি জাত। জাতটির কৌলিক সারি BR (Bio) 8961- AC26-16। ব্রি ধান ২৯-এর সঙ্গে FL378 এর সংকরায়ণ করা এবং পরবর্তী সময়ে F1 generation-এ অ্যান্থার কালচার পদ্ধতি (জীবপ্রযুক্তি) ব্যবহার করে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। এ জাতটির পূর্ণবয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ১২৫ সেমি। ডিগ পাতা খাড়া। দানা লম্বা ও চিকন। ১০০০ পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৩.৭ গ্রাম। ধানে অ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৪%। এ জাতটির গড় জীবনকাল ১৩২ দিন। ধানের গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ৬.২ টন। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে জাতটি প্রতি হেক্টরে ৮.০ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম।

ব্রি ধান ১০৪-এর কৌলিক সারি বিআর ৮৮৬২-২৯-১-৫-১-৩। কৌলিক সারিটি ব্রিতে ২০০৭ সালে আইআর ৭৪০৫২-২১৭-৩-৩-এর সঙ্গে বিআর ৭১৫০-১১-৭-৪-২-১৬- এর সংকরায়ণ করে এবং পরবর্তীকালে বংশানুক্রম সিলেকশনের (Pedigree Selection) মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়। ব্রি গাজীপুরের গবেষণা মাঠে হোমোজাইগাস কৌলিক সারিটি নির্বাচন করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত হোমোজাইগাস কৌলিক সারিটি পাঁচ বছর ফলন পরীক্ষার পর ২০১৯ সালে ব্রির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর গবেষণা মাঠে ও ২০২০ সালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকের মাঠে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।

২০২১ সালে বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সি কর্তৃক স্থাপিত প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় বেশি ফলন দিয়েছে। (পিভিটি) সন্তোষজনক হওয়ায় জাতীয় বীজ বোর্ডের মাঠ মূল্যায়ন দল কর্তৃক সুপারিশের পর জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৮ তম সভায় ব্রি ধান ১০৪ বোরো মৌসুমের উন্নত গুণাগুণসম্পন্ন জাত হিসেবে ছাড়করণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ব্রি ধান ১০৪-এ আধুনিক উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এ জাতের ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা, পাতার রং সবুজ। পূর্ণবয়স্ক গাছের গড় উচ্চতা ৯২ সেন্টিমিটার। জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৭ দিন। ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২১.৫ গ্রাম। এ জাতের ধান বাসমতি টাইপের তীব্র সুগন্ধিযুক্ত। এ ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৯.২ ভাগ। এছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮.৯ ভাগ এবং ভাত ঝরঝরে।

এ জাতের জীবনকাল ব্রি ধান ৫০-এর প্রায় সমান। ধানের গুণগত মান ভালো অর্থাৎ চালের আকার আকৃতি অতিরিক্ত লম্বা চিকন (Extra Long Slender) (৭.৫ মি.মি. লম্বা) এবং রং সাদা। প্রস্তাবিত জাতের ফলন পরীক্ষায় ১০টি অঞ্চলে ব্রি ধান৫০-এর চেয়ে ব্রি ধান ১০৪-এর ফলন প্রায় ১১.৩৩% বেশি। পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শীর্ষ ছয় স্থানে। এটি ব্রি ধান ৫০-এর চেয়ে ১৭.৯৪% বেশি ফলন দিয়েছে।

 

প্রকাশ : ডিসেম্বর ১৩, ২০২২ ২:২১ অপরাহ্ন
এক যুগ গবেষণা শেষে ৬ জাতের নতুন প্রজাতির ধান উদ্ভাবন
কৃষি গবেষনা

দীর্ঘ ১২ বছরের চেষ্টায় সংকরায়ণ বা ইম্যাসকিউলেশন ও পলিনেশন করে ৬ ধরনের নতুন ধান উদ্ভাবনের দাবি করেছেন খুলনার বটিয়াঘাটার গঙ্গারামপুর গ্রামের কৃষক আরুনি সরকার।

স্থানীয় কৃষকরা নতুন জাতের ধানগুলো চাষ করছেন। নতুন এ ধানের স্বীকৃতির জন্য তিনি সরকারের কাছে আবেদন করেছেন।

আরুনির স্বপ্ন ছিল বিলুপ্তপ্রায় স্থানীয় আমন ধানের নতুন জাত উদ্ভাবন করবেন। যার মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকদের দরিদ্রতা রোধ হবে এবং অধিক ফলন হবে। তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

আরুনি সরকারের উদ্ভাবিত ধানগুলো উপকূলীয় অঞ্চলের স্থানীয় আমন ধানের থেকে আরও বেশি লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু, ফলনও ভালো। তুলনামূলক কম কীটনাশক ও সার প্রয়োগ করতে হয় এ জাতের ধান চাষে।

আরুনি সরকার জানান, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন ধরনের ৬টি ধানের ফলন তাদের মাদার ও ফাদার ধানের তুলনায় বেশি। ওই ৬ ধরনের ধান স্থানীয় ও উচ্চফলনশীল ধানের চেয়েও ভালো ফলন দিচ্ছে।’

নতুন ধানগুলোর গাঁথুনি ঘন, শীষ লম্বা ও দুর্যোগসহিষ্ণু হয়েছে বলে জানান তিনি।

খুলনা মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রের জৈষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান, ‘আরনি দাবি করেছেন, তার উদ্ভাবিত ধান আরও বেশি লবণসহিষ্ণু যা আড়াই থেকে ৩ ডিএস পর্যন্ত লবণ সহিষ্ণু। তাছাড়া এসব ধান ১০-১৫ দিন পর্যন্ত জলাবদ্ধতায় টিকে থাকতে পারে। সাধারণত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চাষ হওয়া হাইব্রিড কিংবা উচ্চফলনশীন আমন মৌসুমের ধান ৫-৬ দিন পানির নিচে থাকলে পচে যায়।’

খুলনার বটিয়াঘাটার কাতিয়ানাংলা গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে তিনি জমিতে কাটারিভোগ ও চাপশাইল ধান চাষ করেন। সে সময়ে তিনি ৫০ শতকের প্রতি বিঘায় পেতেন প্রায় ১৬ মণ ধান। গত বছর আরুনি উদ্ভাবিত ‘আলো ধান’ চাষ করে প্রতি বিঘায় প্রায় ২৪ মণের মতো ফলন পেয়েছেন।

খুলনা অঞ্চলের স্থানীয় আমন ধানের জীবনকাল সর্বোচ্চ ১৭০ পর্যন্ত হয়ে থাকে। যেমন, বিআর ২৩-এর জীবনকাল ১৫৪ দিন আবার ‘জটাই বালাম’-এর জীবনকাল ১৪৫ দিন। কিন্তু আরনি উদ্ভাবিত এই দুই ধানের সমন্বয়ে উদ্ভাবিত ‘আলো ধান’-এর জীবনকাল দেখা গেছে ১৩৫ দিন। তেমনিভাবে দেখা গেছে ‘মৈত্রী ধান’ বা ‘গঙ্গাধান’-এর জীবনকাল ফাদার- মাদার-এর চেয়ে ১০ থেকে ১২ দিন কম।

এ ছাড়া নতুন উদ্ভাবিত ধানগাছগুলো তুলনামূলক মোটা হওয়ায় বাতাসে পড়ে যাওয়ার ভয় নেই বলে জানান আরুনি সরকার।

খুলনা অঞ্চলে গত ২ বছর আগে যখন ‘কারেন্ট’ পোকার আক্রমণে অধিকাংশ খেতের ধান নষ্ট হয়ে যায়, তখন আরুনির ধানে কোনো পোকা লাগেনি। যা দেখে আশপাশের কৃষকদের আগ্রহ আরও রেড়ে যায়।

তার উদ্ভাবিত নতুন এই ধানগুলো হলো—’আলো ধান’, ‘লোকজ ধান’, ‘আরুনি ধান’, ‘গঙ্গা ধান’, ‘মৈত্রী ধান’ ও ‘লক্ষ্মীভোগ’ ধান। স্থানীয় কৃষকরা এই ধানগুলোর নামকরণ করেছেন।

স্থানীয় জাতের জটাই বালাম (মাদার) ও বিআর তেইশ (ফাদার) জাতের ইম্যাসকুলেশন ও পলিনেশন বা মিশ্রণে যে ধান তৈরি হয়েছে, সেটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আলো ধান’। এটি প্রতি বিঘায় ২৪ মণ পর্যন্ত উৎপাদিত হতে পারে। সাহেবকচি ও কাঁচড়া জাতের মিশ্রণে তৈরি ধানের নাম ‘লোকজ ধান’। এটি প্রতি বিঘায় ২৩ দশমিক ৮৬ মণ পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা।

এ ছাড়া চাপশাইল ও কুমড়াগইর জাতের সংকরায়ণে তৈরি ধানের নাম রাখা হয়েছে ‘আরুনি ধান’। এই ধানের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি ২৪ দশমিক ১৫ মন প্রতি বিঘায়।

এ ছাড়া বেনাপোল ও ডাকশাইল ধানের মিশ্রণে তৈরি হয়েছে ‘গঙ্গা ধান’। এর ফলন হয়েছে প্রতি বিঘায় ২১ দশমিক ২৫ মণ। বিআর–২৩ (মাদার) ও জটাই বালাম (ফাদার) জাতের ধানের মিশ্রণে তৈরি ধানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মৈত্রী ধান’। এর উৎপাদন ২২ দশমিক ৭৫ মণ। বজ্রমুড়ি ও কুমড়াগইর ধানের মিশ্রণে তৈরি হয়েছে ‘লক্ষ্মীভোগ ধান’। এর উৎপাদন প্রতি বিঘায় ২২ মণ পর্যন্ত হতে পারে।

আরুনি সরকার ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা লোকজ-এর অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার গুলিসাখালি রিসোর্স সেন্টারে আমন ধানের সংকরায়ণ বিষয়ে ৬ দিনের প্রশিক্ষণে অংশ নেন। ফিলিপাইনের কৃষিবিজ্ঞানী ও গবেষক বংকায়া বান তাদের প্রশিক্ষণ দেন।

প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি ফিরে আরুনি বিলুপ্তপ্রায় স্থানীয় আমন ধানের জাতগুলোর মধ্যে ১০টিকে মাদার এবং ১০টি জাতকে ফাদার হিসেবে নিয়ে কাজ শুরু করেন। প্রথম বছরই কৃত্রিম সংকরায়ণের মাধ্যমে ১০ ধরনের ধানের বীজ (এফ-১) তৈরি করেন। পরের বছর থেকে ওই বীজগুলো খেতে রোপন করে নির্ধারণের কাজ করেন তিনি। দীর্ঘ ১০ বছর গবেষণা শেষে ৬ ধরনকে উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য চাষাবাদ উপযোগী হিসেবে স্থানীয় কৃষকরা স্বীকৃতি দেন এই ৬ প্রকার ধানকে। ইতোমধ্য এই ধান চাষ করা শুরু করেছেন স্থানীয় কৃষকরা।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম জানান, ‘আরনি সঠিক পথেই এগুচ্ছেন। আরুণি যে কাজটি করেছেন, আমরা তাকে সংকরায়ণ পদ্ধতি বলে থাকি।’

অধ্যাপক মনিরুল আরও বলেন, ‘তাকে এখন জাতীয় বীজ প্রত্যয়ন বোর্ডের নিকট আবেদন করতে হবে এর স্বীকৃতি পাবার জন্য। আরুনি তার কাজটুকু করে দেখিয়েছেন এখন সরকারের বিরিকে এগিয়ে আসতে হবে।’

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) পরিচালক ডক্টর মোহাম্মদ শাহজাহান কবীর জানান, ‘নিশ্চয়ই সে সঠিক পদ্ধতি মেনে গবেষণা করেছেন। দেখার বিষয়, অধিক ফলনের বৈশিষ্ট্য ধারাবাহিকভাবে থাকে কি না। কখনো কখনো আমরা দেখি দুবছর পর বৈশিষ্ট্য চেঞ্জ হয়ে যায়। আমি বিরির সাতক্ষীরার গবেষকদের বলবো তার উদ্ভাবিত ধান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই কৃষকের উদ্ভাবিত ধানকে কীভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া যায় তা ভেবে দেখব। আসলে কৃষকরাই আমাদের পথ দেখান।’

ইতোমধ্যেই দাকোপ-বটিয়াঘাটা অঞ্চলের কৃষকরা আরুনি উদ্ভাবিত ৬টি জাতের ধান চাষাবাদ শুরু করেছেন। ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ হচ্ছে এই জাতগুলো। চলতিবছর এ অঞ্চলের ৫৮ জন কৃষক ২ শতাধিক বিঘা জমিতে আরুনি উদ্ভাবিত ধানগুলো চাষ করেছেন। যে ধানের ফলন ভালো, লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা সইতে পারে, তুলনামূলক কম কীটনাশক ও সার প্রয়োগ করতে হয়। ফলে কৃষকরা এই ধান চাষে ঝুঁকছেন।

সূত্র : দ্য ডেইলি স্টার

প্রকাশ : ডিসেম্বর ২, ২০২২ ২:৫৬ অপরাহ্ন
রাতের আঁধারে কৃষকের ধান পুড়িয়ে দিল দুর্বৃত্তরা
কৃষি বিভাগ

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে রাতের আঁধারে কৃষকের ধান পুড়িয়ে দিল দুর্বৃত্তরা।

গত বুধবার (৩০ নভেম্বর) দিবাগত রাত এগারোটায় উপজেলার ২নং হিঙ্গুলি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের আজমনগর রেলক্রসিং সংলগ্ন চলাচলের রাস্তার পাশে মাড়াইয়ের জন্য রাখা ধানে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

মনিন্দ্র চৌকিদার বাড়ির স্বদেশ কুমার দাসের স্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পী রাণী দাস (৪৫) জানান, বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক এগারোটার দিকে মাড়াইয়ের জন্য রাখা ধানের স্তূপে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। এরপর রাত তিনটার দিকে আবারো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে যার ফলে ১০ গণ্ডা জমির সম্পূর্ণ ধান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে প্রায় ৪০ হাজার টাকার ধান পুড়ে যায়।

হিঙ্গুলি ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলতাফ হোসেন জানান, ধানে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং এই বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি।

জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুর হোসেন মামুন জানান, হিঙ্গুলি ইউনিয়নের আজমনগর ধুমঘাট রেলক্রসিং সংলগ্ন চলাচলের রাস্তার পাশে মাড়াইয়ের জন্য রাখা ধানে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠানো হয়েছে। তবে এবিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রকাশ : ডিসেম্বর ২, ২০২২ ২:৪৮ অপরাহ্ন
কৃষাণীদের চমৎকার পিঠা উৎসব
প্রাণ ও প্রকৃতি

কৃষাণীদের একেকজন এক ধরনের পিঠা তৈরি করেছেন। কারো হাতে চিতল, কারো হাতে পুলি, নকশি, আর ভাপা পিঠা। আরও আছে দুধ চিতই, পাটিসাপটা, পাখন, তেলের পিঠা।

এদিকে জমির চারপাশে একতারা ও বাদ্যযন্ত্র হাতে নেচে নেচে গান গাইছেন একদল শিল্পী। এ যেন গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া সেই ঐতিহ্য ফিরে এসেছে।

ফসলের মাঠে নাচে-গানে পিঠা-পুলির আয়োজনের মধ্য দিয়ে ব্যতিক্রমী ধানকাটা উৎসব হয়েছে চট্টগ্রামের মিরসরেইয়ে।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার ১১ নং মঘাদিয়া ইউনিয়নের মিয়াপাড়ায় জমিতে পাকা আমন ধান কাটার মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট আইটি বিশেষজ্ঞ, চলচিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব মাহবুব রহমান রুহেল।

মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাস্টারের উদ্যোগে এই উৎসবে তিন শতাধিক কৃষক-কৃষাণী ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শতাধিক কৃষক গায়ে সাদা গেঞ্জি, পরনে লুঙ্গি, মাথায় গামছা ও হাতে কাঁচি নিয়ে ধান কাটার জন্য সড়কের পাশের সারিবদ্ধভাবে অবস্থান করছেন। প্রধান অতিথি ধান কাটা উদ্বোধন করার পর পর একসঙ্গে সবাই প্রায় এক একর আমন ধান কাটেন। এরপর এক রঙ্গের শতাধিক নতুন শাড়ি পরিধান করে ছুটে আসেন গ্রামের কৃষাণীরা।

উৎসবে উপস্থিত কৃষক নুরুল মোস্তফা ও স্বপন চন্দ্র নাথ বলেন, আমার যখন ছোট ছিলাম তখন এমন উৎসব দেখেছি। এমন ধানকাটা উৎসব হারিয়ে গেছে। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর পর আবার ধান কাটা উৎসবে একত্রিত হলাম, সবাই মিলে ধান কাটলাম অনেক ভালো লাগছে।

উৎসবের উদ্যোক্তা মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, আমাদের গ্রামেও শহরের যান্ত্রিকতা চলে আসছে। হারিয়ে গেছে গ্রামবাংলার সকল ঐতিহ্য। তাই হারিয়ে যাওয়া সেই ঐতিহ্যকে ফিরে পেতে আমাদের এই আয়োজন।

তিনি আরো বলেন, নতুন প্রজন্ম জানে না, ধান কাটা উৎসব কি, নবান্ন উৎসব কি নতুন প্রজন্মকে গ্রাম বাংলা সম্পর্কে বার্তা দিতে এমন আয়োজন করেছি। চার শতাধিক কৃষককে নতুন লুঙ্গি, গেঞ্জি, গামছা ও শতাধিক নারীর জন্য নতুন শাড়ির তৈরি করেছি।

ধানকাটা শেষে মঘাদিয়া নুরুল আবছার চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহবুব রহমান রুহেল বলেন, আমি ছোট বেলায় দেখেছি আমার দাদারা ধান কাটা নিয়ে অনেক আনন্দ করতেন। এখন তা হারিয়ে গেছে। মঘাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাস্টার এমন চমৎকার আয়োজন করা জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়ে কিছুতেই তিন ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। আমাদের অনাবাদি জমি চাষাবাদ করতে হবে। আমার কষ্ট লাগে কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। এক শ্রেণির মধ্যস্বত্ত্বভোগী লাভবান হয়। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, কৃষক ছাড়া একটি দেশ কোন প্রকারেই খাদ্যে নিশ্চয়তা দিতে পারে না। তাই কৃষকদের কৃষি কাজে উৎসাহ দিতে বর্তমান সরকার ভর্তূকি ও বিনা মূল্যে সার, কিটনাশক ও বীজ সরবরাহ করে আসছে।

এসময় আরো বক্তব্য রাখেন মঘাদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাস্টার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নুরুল গনি, তথ্য-প্রযুক্তি ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আরিফ মাঈনুদ্দীন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি তোফায়েল উল্ল্যা চৌধুরী নাজমুল, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবছার লিটন, কৃষকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন খোন্দকার হারুন।

আলোচনা সভা শেষে ধান কাটায় চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলকে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।

প্রকাশ : নভেম্বর ২৬, ২০২২ ৯:৫৭ পূর্বাহ্ন
কলা চাষের দিকে আগ্রহী হচ্ছেন বগুড়ার কৃষকরা
কৃষি বিভাগ

বগুড়ায় দিন দিন কলা চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। অন্যান্য ফসলের থেকে কলা চাষে লাভ বেশি হওয়ায় বাড়ছে কলার চাষ। ধান চাষের আয় ব্যয় এক হয়ে যাচ্ছে। তাই কলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন বলে জানান কৃষকরা। বর্তমানে বগুড়ার বিভিন্ন বাজারে কলার হালি ৪০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জানা যায়, বগুড়া জেলার মাটি বেলে দোআঁশ। যা কলা চাষের খুব উপযোগী। শিবগঞ্জ এবং গাবতলি উপজেলা এই জেলায় কলা চাষের মধ্যে বিখ্যাত। দেশজুড়ে এই জেলার মোকামতলা কলার হাটের বেশ সুনাম রয়েছে। এই জেলায় অনুপম, সাগর, সবরি, বিচিকলা, চিনি চাম্পাসহ বিভিন্ন নামের কলা চাষ হয়ে থাকে। কলা বিক্রির জন্য জেলার মহাস্থানগড়, রহবল ও মোকামতলায় পাইকারি কলার হাট বসে থাকে। যেখান থেকে ট্রাকে করে কলা ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামে বিক্রি হয়ে থাকে। বর্তমানে জেলায় কলার ব্যাপক ফলন বাজারদর ভালো পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ১৯ টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও এবছর ভালো ফলন হওয়ায় প্রায় ২১ টণ উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

বগুড়া মহাস্থানগড় এলাকার কলা চাষি মো. সুমন বলেন, এবছর কলার ভালো ফলন হয়েছে। চারা রোপনের ১২-১৩ মাসের মধ্যেই কলার ফলন পাওয়া যায়। কলার পরিমান অনুযায়ী প্রতি কাঁদি কলা ৪০০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

তিনি আরো বলেন, বাজারে বেশির ভাগই হিট দিয়ে পাকানো কলা পাওয়া যায়। আমাদের এখানে আমরা গাছ পাকা কলা বিক্রি করে থাকি।

বগুড়া জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৪০-৫০ জাতের কলার চাষ হয়। এর মধ্যে অমৃত সাগর, সবরি, কবরি, চাঁপা, মেহের সাগর, কাবুলি, বিচিকলা ও আনাজি কলা সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। বর্তমানে বারিকলা-১, বারিকলা-২, বারিকলা-৩ ও বারিকলা-৪ নামের চারটি উচ্চ ফলনশীল কলার জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।

প্রকাশ : নভেম্বর ২৫, ২০২২ ১০:০৫ পূর্বাহ্ন
মৌলভীবাজারে আমন ধানের বাম্পার ফলন
কৃষি বিভাগ

মৌলভীবাজার জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সোনালী ধানে ভরা। চলতি আমন মৌসুমে আনুষ্ঠানিকভাবে খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে একই জমিতে রোপা আমন ধান রোপণের পর কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে কর্তন শুরু হয়েছে।

কৃষি বিভাগ বলছে যান্ত্রিক নির্ভর হলে শ্রমিক সংকট থাকবে না। যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

প্রতি বছর ধান কাটার মৌসুমে দেখা দেয় শ্রমিক সংকট। শ্রমিক সংকটের কারণে অনেকেই সময়তো সোনালি ফসল ধান ঘরে তুলতে পারে না। এতে অনেক জমিতে ধান ঝরে গিয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি হতাশায় থাকেন। রোপণ ও কর্তন যান্ত্রিক হওয়ায় কম খরচে কৃষকরা ফলন ভালো পাচ্ছেন।

স্থানীয় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ পাতাকঁড়ি এগ্রোর খামার মালিক, সৈয়দ উমেদ আলী জানান, এ বছর ১২৩ বিগা জমিতে হাইব্রিড ও ব্রি ৭৫ জাতের ধান চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৮৩ বিগা জমিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে চারা রোপণ করেন এবং ওই জমিতে ধান কর্তন করছেন।

যান্ত্রিকীকরণের কারণে খরচ কমে গেছে, ফলন ভালো হয়েছে। মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামসুদ্দিন আহমদ জানান, এ বছর বিভিন্ন জাতের ব্রি-ধান ও হাইব্রিড ধান কৃষকরা চাষাবাদ করেছেন। অনেক জমিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনে চারা রোপণ করা হয় ও কর্তন করা হচ্ছে কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে।

ফলন ভালো হওয়ায় চাষীরাও খুশি। তিনি আরও জানান, আমন ধান চাষে এ বছর অনুকূল পরিবেশ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে প্রতি বছর অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে ও ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, বর্তমান সরকার এক ইঞ্চি জমি যাতে খালি পরে না থাকে সে জন্য, কৃষি খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি ও প্রণোদনা দিচ্ছে। এতে করে কৃষকদের মধ্যে উৎসাহ জাগছে।

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop