২:০০ পূর্বাহ্ন

শুক্রবার, ১০ মে , ২০২৪
ads
ads
শিরোনাম
প্রকাশ : মার্চ ১৯, ২০২২ ১১:৫১ পূর্বাহ্ন
অধিক ডিম ও মাংস উৎপাদনে দেশী মুরগি পালন করবেন যেভাবে
পোলট্রি

বাংলাদেশের গ্রাম এলাকায় প্রায় প্রতিটি পরিবার দেশী মুরগি পালন করে থাকে। এদের উৎপাদন ক্ষমতা বিদেশী মুরগির চেয়ে কম। উৎপাদন ব্যয়ও অতি নগণ্য। এটি অধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। এদের মাংস ও ডিমের মূল্য বিদেশী মুরগীর তুলনায় দ্বিগুণ, এর চাহিদাও খুবই বেশী। দেশী মুরগির মৃত্যুহার বাচ্চা বয়সে অধিক এবং অপুষ্টিজনিত কারনে উৎপাদন আশানুরূপ নয়। বাচ্চা বয়সে দেশী মোরগ-মুরগির মৃত্যুহার কমিয়ে এনে সম্পূরক খাদ্যের ব্যবস্থা করলে দেশী মুরগি থেকে অধিক ডিম ও মাংস উৎপাদন করা সম্ভব।

উল্লেখিত অবস্থার আলোকে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট দেশী মুরগি উৎপাদনে উন্নত কৌশল শীর্ষক প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করেছে। এ কৌশল ব্যবহার করে খামারিরা দেশী মুরগি থেকে অধিক ডিম ও মাংস উৎপাদন করে পারিবারিক পুষ্টি ও আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে।

উদ্দেশ্য:
সম্পুরক খাদ্য, রানীক্ষেত ও বসন্তের প্রতিষেধক প্রদান করে এবং বন্য জন্তুর কবল থেকে মুক্ত রেখে দেশী মুরগি, বিশেষ করে ছোট বাচ্চার মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা যায়।
দেশী মুরগির দৈহিক ওজন ও ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি করা।

প্রযুক্তি ব্যবহারের পদ্ধতি:
প্রযুক্তিটি গ্রামীণ পর্যায়ে সকল গৃহস্থ পরিবারই ব্যবহার করতে পারবেন। খামারের আকার অনুযায়ী প্রত্যেক খামারীর জন্য মোরগ-মুরগির সংখ্যা

নিম্নে দেওয়া হলো-
খামারের আকার আবাদী জমির পরিমাণ (শতাংশ) মোরগ/মুরগি
ছোট ৫০ শতাংশ ১টি মোরগ ও ৩টি মুরগি
মাঝারী ও বড় ৫০ ও তার অধিক ১টি মোরগ ও ৬টি মুরগি

দেশীয় পদ্ধতিতে দেশি মোরগ পালন:
অনেকেই জানতে চেয়ে ছিলেন যে সল্প মূলধন দিয়ে কি ব্যবসা করা যায়। তাদের জন্য দেশি মোরগ হতে পারে একটি সময়পযোগি ব্যবসা। সল্প জায়গায় অল্প টাকা বিনিয়োগ করে সল্প সময়ে অধিক আয় করা যায়। বসত বাড়িতে মুরগি চাষ হচ্ছে একটি সহজ এবং লাভজনক কাজ। বাড়ির গৃহিণীরা খামার স্থাপন ও পরিচালনা করতে পারে। একটি মোরগ একটি মুরগির তুলনায় দ্রুত বাড়ে আর বাজারে দেশি মোরগের প্রচুর চাহিদা থাকায় মোরগ বিক্রি করতে তেমন বেগ পেতে হয়না এবং বাজারে ভাল দাম ও পাওয়া যায়।

দেশি মোরগ আবদ্ধ ও ছেড়ে পালন করা যায়। তবে ছেড়ে পালন করলে বেশি লাভবান হওয়া যায় কারন মোরগ নিজের খাদ্য নিজে কুড়িয়ে খায়।এরা মুক্ত আলো বাতাস বিশেষ করে প্রচুর সূর্য কিরণে বেড়ে উঠে যা তাদের শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি করতে সাহায্য করে। এদের খাবারের জন্য তেমন কোন খরচ করতে হয় না।

মোরগ নির্বাচনঃ- দেশি মোরগ বা মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের জন্য তেমন কোন হ্যাচারি গড়ে ওঠেনি তাই নিজেকে ই দেখে শুনে সুস্থ সবল ও নিরোগ মোরগ সংগ্রহ করতে হবে। মূলত ৪০০-৬০০ গ্রামের মোরগ দিয়ে শুরু করলে ভাল ফলাফল আশা করা যায়। কারন ঐ সময়ের পর মোরগ গুলো দ্রুত বাড়ে এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা পেলে ২ মাস পর মোরগ গুলোর গড় ওজন ২ কেজির উপর হবে। প্রতি কিলো দেশি মোরগের মূল্য কেমন আছে সেটা নাই বা বললাম। আপনারা নিজেরা লাভ-ক্ষতি বের করে নিন।

মুরগির ঘর তৈরির নিয়মঃ- মোরগের জন্য খোলামেলা ঘর হতে হবে। ১.৫ মিটার (৫ ফুট) লম্বা X১.২ মিটার (৪ ফুট) চওড়া এবং ১ মিটার (৩.৫ ফুট) উঁচু ঘর তৈরি করতে হবে। ঘরের বেড়া বাঁশের তরজা বা কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি করতে হবে। এছাড়া মাটির দেয়ালও তৈরি করা যাবে। বেড়া বা দেওয়ালে আলো বাতাস চলাচলের জন্য ছিদ্র থাকতে হবে। ঘরের চাল খড়, টিন বা বাঁশের তরজার সাথে পলিথিন ব্যবহার করে তৈরি করা যাবে। এরকম ঘরে ১০-১৫টি মোরগ পালন করা যায়।

খাবারঃ- বাড়ির প্রতিদিনের বাড়তি বা বাসী খাদ্য যেমন ফেলে দেওয়া এঁটোভাত, তরকারি,
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গম, ধান, পোকামাকড়, শাক সবজির ফেলে দেওয়া অংশ, ঘাস, লাতা পাতা, কাঁকর, পাথর কুচি ইত্যাদি মুরগি কুড়িয়ে খায়।

পরিচর্যাঃ- ছেড়ে পালন পদ্ধতিতে মুরগি পরিচর্যার জন্য সময় বা লোকজনের তেমন দরকার পড়ে না। তারপরও কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়। সকালে মুরগির ঘর খুলে কিছু খাবার দিতে হবে। সন্ধ্যায় মুরগি ঘরে ওঠার আগে আবার কিছু খাবার দিতে হবে। ঘরে উঠলে দরজা বন্ধ করে দিতে হবে।মুরগির পায়খানা ঘরের মেঝেতে যেন লেপ্টে না যায় সেজন্য ঘরের মেঝেতে ধানের তুষ, করাতের গুঁড়া ২.৫ সে.মি. (১ ইঞ্চি) পুরু করে বিছাতে হবে। পায়খানা জমতে জমতে শক্ত জমাট বেঁধে গেলে বারবার তা উলট-পালট করে দিতে হবে এবং কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করতে হবে। এ পদ্ধতিতে দেশি মোরগ পালন করা গেলে প্রায় তেমন কোন খরচ ছাড়াই ভাল একটা মুনাফা পাওয়া যাবে।

দেশি মুরগি পালনে যত্ন নিতে হবে:
সাকুল্যে ৫-১০টি মুরগি। বাড়ির আশপাশে চরে বেড়িয়ে বাড়ির উচ্ছিষ্ট খাবার, পোকামাকড়, কেঁচো, কচি ঘাসপাতা খায় তারা। সে অর্থে প্রতিপালনের কোনও খরচ নেই বললে চলে। আপাতদৃষ্টিতে লাভজনক মনে হলেও আসলে অতটা লাভ হয় না। ছাড়া মুরগি অন্যত্র ডিম পেড়ে আসে, কখনও রোগে মারা যায়। তাই দেশি মুরগির পালন লাভজনক করতে হলে কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার, সে জাত নির্বাচনেই হোক বা রোগ পরিচর্যায়।

প্রথমে আসি মুরগির জাতে। ব্রয়লার খামারের হাইব্রিড মুরগি উঠোনে ছেড়ে পালন করা যায় না। তাই খাঁটি জাতগুলোকে বাছতে হবে। যেমন, রোড আইল্যান্ড রেড (আরআইআর) বা ব্ল্যাক অস্ট্রালর্প। রঘুনাথপুর, বালুরঘাটের রাজ্য মুরগি খামারে লাল বা আরআইআর এবং কালো বা ব্ল্যাক অস্ট্রালর্প মুরগির বাচ্চা পাওয়া যায়। ইদানীং কালে বনরাজা, গিরিরাজা, গ্রামরপ্রিয়া ইত্যাদি জাত কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হয়েছে।

মুরগি রাতে রাখার জন্য ঘর বানাতে হবে। মাটি থেকে সামান্য উপরে বাঁশ বা কাঠ দিয়ে কম খরচে খড় বা টালি ঢেকে তৈরি ঘরগুলো যেন শুকনো, পরিষ্কার হয়। আর আলো-বাতাস খেলে। প্রতিটি পাখির জন্য গড়ে তিন বর্গফুট জায়গা ধরতে হবে।

দেশি মুরগি চরে বেড়িয়ে তার খাবার সংগ্রহ করে নিলেও এ ধরনের উন্নত জাতের মুরগির পুরো উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগাতে অল্প পরিমাণে সুষম খাবার দেওয়া প্রয়োজন। চালের গুঁড়ো (৩০০ গ্রাম), খুদ বা গম ভাঙা (২৮০ গ্রাম), সর্ষে/ তিল খোল ( ২০০ গ্রাম), মাছ বা সোয়াবিন গুঁড়ো (২০০ গ্রাম), ভিটামিন ও খনিজ লবণ মিশ্রণ যেমন সাপ্লিভিট এম (২০ গ্রাম) মিশিয়ে মুরগির সংখ্যা অনুযায়ী মাথা পিছু ৫০-৭০ গ্রাম হিসাবে অর্ধেক সকালে ও অর্ধেক বিকালে খেতে দিতে হবে। রাতে মুরগি রাখার যে ঘর আছে, সেখানে নির্দিষ্ট পাত্রে জল ও খাবার দিতে হবে। যাতে সকালে ঘর থেকে বেরনো বা পরে ঘরে ঢোকার সময় ওই খাবার ও জল খাওয়া অভ্যাস তৈরি হয়। এই অভ্যাস থাকলে ওষুধ গুলে খাওয়াতে সুবিধা হয়। মুরগির খাবার সবসময় শুকনো ও পরিষ্কার রাখতে হবে। বেশি দিন জমা রাখলে ছত্রাক সংক্রমণ ঘটে।

সংকরায়ণ পদ্ধতিতে দেশি মুরগির সঙ্গে উন্নত মোরগ রেখে প্রাকৃতিক প্রজনন ঘটিয়ে দেশি মুরগির জিনগত উৎকর্ষতা বাড়ানো যায়। প্রতি ১০টি দেশি মুরগি পিছু ১টি উন্নত জাতের মোরগ রাখতে হবে। যে সংকর মুরগি জন্মাবে, তা দেশি মুরগির চেয়ে দ্রুত (৪-৫ মাস বয়সে) এবং প্রায় দ্বিগুণ (বছরে ১২০-১৪০টি) ডিম দেবে।

রোগব্যাধি মুরগি পালনের অন্যতম সমস্যা। তাই নিয়মিত মুরগির ঘর চুন বা জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। প্রতি মাসে একবার করে কৃমিনাশক ওষুধ (পাইপেরাজিন তরল বয়স অনুযায়ী ০.৫-১ মিলি) জলে গুলে খাওয়াতে হবে। রানিক্ষেত বা বসন্তের মতো কয়েকটি সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত টিকাকরণ জরুরি। টিকা দেওয়ার দশ দিন আগে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। টিকাকরণ বিশেষত রানিক্ষেত টিকা ৭-১০ দিন বয়সে নাকে বা চোখে এক ফোঁটা, ৩০ দিন বয়সে আর এক বার, ২ মাস বয়সে প্রথম কৃমির ওষুধ এবং আড়াই মাস বয়সে ডানার তলায় ০.৫ মিলি ইঞ্জেকশন অবশ্যই নিতে হবে। ঝিমুনি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট, পাতলা বা রক্ত পায়খানা নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাকট্রিম ডিএস বা সেপম্যাক্স (১টি বড়ি ১০টি বড় বা ২০টি বাচ্চা মুরগির জন্য) খাবারে বা জলে গুলে ড্রপারে করে খাইয়ে দিতে হবে (৩/৫/৭ দিন)।

দেশী মুরগি বাণিজ্যিকভাবে পালন:
দেশী মুরগি বানিজ্যিকভাবে পালন কৌশল আয় বৃদ্ধি ও পারিবারিক পুষ্টির নিশ্চয়তা বিধানে দেশী মুরগী প্রতিপালন বিশেষ অবদান রাখতে পারে । আমরা সবাই বলে থাকি দেশী মুরগির উৎপাদন কম । কিন্তু বিভিন্ন পর্যায়ে বিশেষ লক্ষ্য এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশী মুরগীর উৎপাদন দ্বিগুনের ও বেশী পাওয়া সম্ভব। দেশী মুরগি থেকে লাভ জনক উৎপাদন পওয়ায় বিভিন্ন কৌশল এখানে বর্ননা করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে দেশী মুরগির ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি করে বাজারে বিক্রি করার চেয়ে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরী করে ৮-১২ সপ্তাহ বয়সে বিক্রি করলে লাভ বেশী হয়। এক সংঙ্গে ১০-১২ টি মুরগি নিয়ে পালন শূরু করতে হবে। তবে কখনও ১৫-১৬ টির বেশী নেওয়া ঠিক না । তাতে অনেক অসুবিধাই হয় । শুরুতে মুরগি গুলোকে কৃমি নাষক ঔষধ খাওয়ানোর পরে রানীক্ষেত রোগের টীকা দিতে হবে। মুরগির গায়ে উকুন থাকলে তাও মেরে নিতে হবে। প্রতিটি মুরগিকে দিনে ৫০-৬০ গ্রাম হারে সুষম খাদ্য দিতে হবে। আজকাল বাজারে লেয়ার মুরগির সুষম খাদ্য পাওয়া যায় । তা ছাড়া আধা আবদ্ধ এ পদ্ধতিতে পালন করলে লাভ বেশী হয়।

মুরগির সাথে অবশ্যই একটি বড় আকারের মোরগ থাকতে হবে। তা না হলে ডিম ফুটানো যাবে না । ডিম পাড়া শেষ হলে মুরগি উমে আসবে । তখন ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটানোর ব্যবস্থা নিতে হয়।এক সঙ্গে একটি মুরগির নীচে ১২-১৪ টি ডিম বসানো যাবে। খামারের আদলে বাঁশ, কাঠ খড়, বিচলী তাল নারকেল সুপারির পাতা দিয়ে যত কম খরচে স্থানান্তর যোগ্য ঘর তৈরী করা সম্ভব তা করা যায়। ঘর তৈরীর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সঠিক মাপের হয় এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচল করতে পারে । বানানোর পর ঘরটিকে বাড়ীর সব চেয়ে নিরিবিলি স্থানে রাখতে হবে । মাটির উপর ইট দিয়ে তার উপর বসাতে হবে। তাহলে ঘর বেশী দিন টিকবে ।

ফুটানোর ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষনঃ- আরেকটি প্রয়োজনীয় ̧গুরুত্বপূর্ন কাজ। ডিম পাড়ার পর ডিম সসংগ্রহের সময় পেন্সিল দিয়ে ডিমের গায়ে তারিখ লিখে ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষন করতে হবে। ডিম পাড়া শেষ হলেই মুরগি কুঁচো হবে। গরম কালে ৫-৬ দিন বয়সের ডিম এবং শীত কালে ১০-১২ দিন বয়সের ডিম ফুটানোর জন্য নির্বাচন করতে হবে।

দেশী মুরগি পালন কৌশলের বিশেষ নজর দেয়ার ধাপ সমূহ:
উমে বসানো মুরগির পরিচর্যা করতে হবে। মুরগির সামনে পাত্রে সবসময় খাবার ও পানি দিয়ে রাখতে হবে যাতে সে ইচ্ছে করলেই খেতে পারে । তাহলে মুরগির ওজন হ্রাস পাবেনা এতে বাচ্চা তোলার পর আবার তাড়াতাড়ি ডিম পাড়া আরম্ভ করবে।

ডিম বসানোর ৭-৮ দিন পর আলোতে রাতের বেলা ডিম পরীক্ষা করলে বাচ্চা হয় নাই এমন ডিম ̧লো চেনা যাবে এবং বের করে অনতে হবে। বাচ্চা হওয়া ডিম ̧লো সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন মুরগি বিরক্ত না হয়।
প্রতিটি ডিমের গায়ে সমভাভে তাপ লাগার জন ̈ দিনে কমপেক্ষ ৫-৬ বার ওলট পালট করে দিতে হবে।
বাতাসের আর্দ্রতা কম হলে বিশেষ করে খুব গরম ও শীতের সময় ডিম উমে বসানোর ১৮- ২০দিন পর্যন্ত কুসুম গরম পানিতে হাতের আঙ্গুল ভিজিয়ে পানি স্প্রে করে দিতে হবে।
*ফোটার পর ৫-৬ ঘন্টা পর্যন্ত মাকে দিয়ে বাচ্চাকে উম দিতে হবে। তাতে বাচ্চা শুকিয়ে ঝরঝরে হবে।

বাচ্চা ফুটার পর বাচ্চার পরিচর্যা ও ডিম পাড়া মুরগির পরিচর্যা :- গরম কালে বাচ্চার বয়স ৩-৪ দিন এবং শীত কালে ১০-১২ দিন পর্যন্ত বাচ্চার সাথে মাকে থাকতে দিতে হবে। তখন মুরগি নিজেই বাচ্চাকে উম দিবে। এতে কৃত্রিম উমের (ব্রুডিং ) প্রয়োজন হবে না। এ সময় মা মুরগিকে খাবার দিতে হবে। মা মুরগির খাবারের সাথে বাচ্চার খাবার ও কিছূ আলাদা করে দিতে হবে।

বাচ্চা গুলো মায়ের সাথে খাবার খাওয়া শিখবে। উপরোক্ত বর্ণিত সময়ের পর মুরগিকে বাচ্চা থেকে আলাদা করতে হবে। এ অবস্থায় বাচ্চাকে কৃত্রিম ভাবে ব্রুডিং ও খাবার দিতে হবে। তখন থেকেই বাচ্চা পালনের মত বাচ্চা পালন পদ্ধতির সব কিছুই পালন করতে হবে। মা মুরগিকে আলাদা করে লেয়ার খাদ্য দিতে হবে। এ সময় মা মুরগিকে তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার জন্য পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিন দিতে হবে।

মা মুরগি ও বাচ্চা এমনভাবে আলাদা করতে হবে যেন তারা দৃষ্টির বাহিরে থাকে। এমন কি বাচ্চার চিচি শব্দ যেন মা মুরগি শুনতে না পায় । তা না হলে মা ও বাচ্চার ডাকা ডাকিতে কেউ কোন খাবার বা পানি কিছুই খাবে না । আলাদা করার পর অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে গেলে আর কোন সমস্য থাকে না ।প্রতিটি মুরগিকে এ সময় ৮০-৯০ গ্রাম লেয়ার খাবার দিতে হবে। সাথে সাথে ৫-৭ ঘন্টা চড়ে বেড়াতে দিতে হবে। প্রতি ৩-৪ মাস পর পর কৃমির ঔষধ এবং ৪-৫ মাস পর পর আর. ডি. ভি . টীকা দিতে হবে।

দেশে একটি মুরগি ডিম পাড়ার জন্য ২০ -২৪দিন সময় নেয় । ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য ২১ দিন সময় নেয় । বাচ্চা লালন পালন করে বড় করে তোলার জন্য ৯০-১১০ দিন সময় নেয় । ডিম থেকে এ ভাবে (৯০-১১০ দিন ) বাচ্চা বড় করা পর্যন্ত একটি দেশী মুরগির উৎপাদন চক্র শেষ করতে স্বাভাবিক অবস্থায় ১২০- ১৩০ দিন সময় লাগে।

কিন্তু মাকে বাচ্চা থেকে আলাদা করার ফলে এই উৎপাদন চক্র ৬০ -৬২ দিনের মধ্যে সমাপ্ত হয়। বাকি সময় মুরগিকে ডিম পাড়ার কাজে ব্যবহার করা যায় । এই পালন পদ্ধতিকে ক্রিপ ফিডিং বলে । * ক্রিপ ফিডিং পদ্ধতিতে বাচ্চা পালন করলে মুরগিকে বাচ্চা পালনে বেশী সময় ব্যায় করতে হয় না । ফলে ডিম পাড়ার জন্য মুরগি বেশী সময় দিতে পারে । এই পদ্ধতিতে বাচ্চা ফুটার সংখ্যা বেশী হয় । দেখা গেছে বাচ্চার মৃত্যুহারও অনেক কম থাকে। মোট কথা অনেক দিক দিয়েই লাভবান হওয়া যায় । এই পদ্ধতি বর্তমানে অনেকে ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছেন।

প্রকাশ : মার্চ ৫, ২০২২ ১১:২০ পূর্বাহ্ন
মাছ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন রপ্তানির পর্যায়ে পৌঁছেছে- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
প্রাণিসম্পদ

মাছ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন বিদেশে রপ্তানির পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

শুক্রবার (০৪ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দীপ্ত টেলিভিশনের স্টুডিওতে এসিআই দীপ্ত কৃষি অ্যাওয়ার্ড ২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা জানান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। বাংলাদেশ নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান, সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম, দীপ্ত টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল হাসান, এসিআই এগ্রিবিজনেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফ এইচ আনসারী প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় মন্ত্রী আরো বলেন, “কৃষি বাঙালির প্রাণ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে কৃষককে বাঁচাতে হবে। আর কৃষকের প্রাণ হচ্ছে কৃষি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কৃষির একটি বড় খাত। এ খাতে আমরা অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছি। মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনই নয়, আমরা এখন বিদেশে রপ্তানির পর্যায়ে পৌঁছেছি”।

তিনি আরো বলেন, “পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা মেটানো, বেকারত্ব দূর করা, কর্মোদ্যোক্তা তৈরি করা এবং নতুন আঙ্গিকে গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখার ক্ষেত্রে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত ব্যাপক ভুমিকা পালন করছে। সে ভূমিকার সফল ও সার্থক ক্যাপ্টেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে”।

অনুষ্ঠানে সেরা মাঠ ফসল উৎপাদনকারী কৃষক, সেরা গবাদিপশুর খামারি, সেরা ফল বাগানি, সেরা সমবায় কৃষি, সেরা সবজি চাষি, সেরা পোল্ট্রি খামারি, সেরা মৎস্য চাষি, সেরা কৃষি উদ্ভাবক, সেরা কৃষি উদ্যোক্তা নারী ও সেরা কৃষি উদ্যোক্তা পুরুষসহ মোট ১০টি শ্রেণিতে কৃষি উদ্যোক্তা, খামারি ও উদ্ভাবকদের পুরস্কৃত করা হয়।

প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০২২ ৪:০৭ অপরাহ্ন
অধিক ডিম ও মাংস উৎপাদনে দেশী মুরগি পালন কৌশল
পোলট্রি

বাংলাদেশের গ্রাম এলাকায় প্রায় প্রতিটি পরিবার দেশী মুরগি পালন করে থাকে। এদের উৎপাদন ক্ষমতা বিদেশী মুরগির চেয়ে কম। উৎপাদন ব্যয়ও অতি নগণ্য। এটি অধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। এদের মাংস ও ডিমের মূল্য বিদেশী মুরগীর তুলনায় দ্বিগুণ, এর চাহিদাও খুবই বেশী। দেশী মুরগির মৃত্যুহার বাচ্চা বয়সে অধিক এবং অপুষ্টিজনিত কারনে উৎপাদন আশানুরূপ নয়। বাচ্চা বয়সে দেশী মোরগ-মুরগির মৃত্যুহার কমিয়ে এনে সম্পূরক খাদ্যের ব্যবস্থা করলে দেশী মুরগি থেকে অধিক ডিম ও মাংস উৎপাদন করা সম্ভব।

উল্লেখিত অবস্থার আলোকে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট দেশী মুরগি উৎপাদনে উন্নত কৌশল শীর্ষক প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করেছে। এ কৌশল ব্যবহার করে খামারিরা দেশী মুরগি থেকে অধিক ডিম ও মাংস উৎপাদন করে পারিবারিক পুষ্টি ও আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে।

উদ্দেশ্য:
সম্পুরক খাদ্য, রানীক্ষেত ও বসন্তের প্রতিষেধক প্রদান করে এবং বন্য জন্তুর কবল থেকে মুক্ত রেখে দেশী মুরগি, বিশেষ করে ছোট বাচ্চার মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা যায়।
দেশী মুরগির দৈহিক ওজন ও ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি করা।

প্রযুক্তি ব্যবহারের পদ্ধতি:
প্রযুক্তিটি গ্রামীণ পর্যায়ে সকল গৃহস্থ পরিবারই ব্যবহার করতে পারবেন। খামারের আকার অনুযায়ী প্রত্যেক খামারীর জন্য মোরগ-মুরগির সংখ্যা

নিম্নে দেওয়া হলো-
খামারের আকার আবাদী জমির পরিমাণ (শতাংশ) মোরগ/মুরগি
ছোট ৫০ শতাংশ ১টি মোরগ ও ৩টি মুরগি
মাঝারী ও বড় ৫০ ও তার অধিক ১টি মোরগ ও ৬টি মুরগি

দেশীয় পদ্ধতিতে দেশি মোরগ পালন:
অনেকেই জানতে চেয়ে ছিলেন যে সল্প মূলধন দিয়ে কি ব্যবসা করা যায়। তাদের জন্য দেশি মোরগ হতে পারে একটি সময়পযোগি ব্যবসা। সল্প জায়গায় অল্প টাকা বিনিয়োগ করে সল্প সময়ে অধিক আয় করা যায়। বসত বাড়িতে মুরগি চাষ হচ্ছে একটি সহজ এবং লাভজনক কাজ। বাড়ির গৃহিণীরা খামার স্থাপন ও পরিচালনা করতে পারে। একটি মোরগ একটি মুরগির তুলনায় দ্রুত বাড়ে আর বাজারে দেশি মোরগের প্রচুর চাহিদা থাকায় মোরগ বিক্রি করতে তেমন বেগ পেতে হয়না এবং বাজারে ভাল দাম ও পাওয়া যায়।

দেশি মোরগ আবদ্ধ ও ছেড়ে পালন করা যায়। তবে ছেড়ে পালন করলে বেশি লাভবান হওয়া যায় কারন মোরগ নিজের খাদ্য নিজে কুড়িয়ে খায়।এরা মুক্ত আলো বাতাস বিশেষ করে প্রচুর সূর্য কিরণে বেড়ে উঠে যা তাদের শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি করতে সাহায্য করে। এদের খাবারের জন্য তেমন কোন খরচ করতে হয় না।

মোরগ নির্বাচনঃ- দেশি মোরগ বা মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের জন্য তেমন কোন হ্যাচারি গড়ে ওঠেনি তাই নিজেকে ই দেখে শুনে সুস্থ সবল ও নিরোগ মোরগ সংগ্রহ করতে হবে। মূলত ৪০০-৬০০ গ্রামের মোরগ দিয়ে শুরু করলে ভাল ফলাফল আশা করা যায়। কারন ঐ সময়ের পর মোরগ গুলো দ্রুত বাড়ে এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা পেলে ২ মাস পর মোরগ গুলোর গড় ওজন ২ কেজির উপর হবে। প্রতি কিলো দেশি মোরগের মূল্য কেমন আছে সেটা নাই বা বললাম। আপনারা নিজেরা লাভ-ক্ষতি বের করে নিন।

মুরগির ঘর তৈরির নিয়মঃ- মোরগের জন্য খোলামেলা ঘর হতে হবে। ১.৫ মিটার (৫ ফুট) লম্বা X১.২ মিটার (৪ ফুট) চওড়া এবং ১ মিটার (৩.৫ ফুট) উঁচু ঘর তৈরি করতে হবে। ঘরের বেড়া বাঁশের তরজা বা কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি করতে হবে। এছাড়া মাটির দেয়ালও তৈরি করা যাবে। বেড়া বা দেওয়ালে আলো বাতাস চলাচলের জন্য ছিদ্র থাকতে হবে। ঘরের চাল খড়, টিন বা বাঁশের তরজার সাথে পলিথিন ব্যবহার করে তৈরি করা যাবে। এরকম ঘরে ১০-১৫টি মোরগ পালন করা যায়।

খাবারঃ- বাড়ির প্রতিদিনের বাড়তি বা বাসী খাদ্য যেমন ফেলে দেওয়া এঁটোভাত, তরকারি,ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গম, ধান, পোকামাকড়, শাক সবজির ফেলে দেওয়া অংশ, ঘাস, লাতা পাতা, কাঁকর, পাথর কুচি ইত্যাদি মুরগি কুড়িয়ে খায়।

পরিচর্যাঃ- ছেড়ে পালন পদ্ধতিতে মুরগি পরিচর্যার জন্য সময় বা লোকজনের তেমন দরকার পড়ে না। তারপরও কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়। সকালে মুরগির ঘর খুলে কিছু খাবার দিতে হবে। সন্ধ্যায় মুরগি ঘরে ওঠার আগে আবার কিছু খাবার দিতে হবে। ঘরে উঠলে দরজা বন্ধ করে দিতে হবে।মুরগির পায়খানা ঘরের মেঝেতে যেন লেপ্টে না যায় সেজন্য ঘরের মেঝেতে ধানের তুষ, করাতের গুঁড়া ২.৫ সে.মি. (১ ইঞ্চি) পুরু করে বিছাতে হবে। পায়খানা জমতে জমতে শক্ত জমাট বেঁধে গেলে বারবার তা উলট-পালট করে দিতে হবে এবং কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করতে হবে। এ পদ্ধতিতে দেশি মোরগ পালন করা গেলে প্রায় তেমন কোন খরচ ছাড়াই ভাল একটা মুনাফা পাওয়া যাবে।

দেশি মুরগি পালনে যত্ন নিতে হবে:
সাকুল্যে ৫-১০টি মুরগি। বাড়ির আশপাশে চরে বেড়িয়ে বাড়ির উচ্ছিষ্ট খাবার, পোকামাকড়, কেঁচো, কচি ঘাসপাতা খায় তারা। সে অর্থে প্রতিপালনের কোনও খরচ নেই বললে চলে। আপাতদৃষ্টিতে লাভজনক মনে হলেও আসলে অতটা লাভ হয় না। ছাড়া মুরগি অন্যত্র ডিম পেড়ে আসে, কখনও রোগে মারা যায়। তাই দেশি মুরগির পালন লাভজনক করতে হলে কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার, সে জাত নির্বাচনেই হোক বা রোগ পরিচর্যায়।

প্রথমে আসি মুরগির জাতে। ব্রয়লার খামারের হাইব্রিড মুরগি উঠোনে ছেড়ে পালন করা যায় না। তাই খাঁটি জাতগুলোকে বাছতে হবে। যেমন, রোড আইল্যান্ড রেড (আরআইআর) বা ব্ল্যাক অস্ট্রালর্প। রঘুনাথপুর, বালুরঘাটের রাজ্য মুরগি খামারে লাল বা আরআইআর এবং কালো বা ব্ল্যাক অস্ট্রালর্প মুরগির বাচ্চা পাওয়া যায়। ইদানীং কালে বনরাজা, গিরিরাজা, গ্রামরপ্রিয়া ইত্যাদি জাত কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হয়েছে।

মুরগি রাতে রাখার জন্য ঘর বানাতে হবে। মাটি থেকে সামান্য উপরে বাঁশ বা কাঠ দিয়ে কম খরচে খড় বা টালি ঢেকে তৈরি ঘরগুলো যেন শুকনো, পরিষ্কার হয়। আর আলো-বাতাস খেলে। প্রতিটি পাখির জন্য গড়ে তিন বর্গফুট জায়গা ধরতে হবে।

দেশি মুরগি চরে বেড়িয়ে তার খাবার সংগ্রহ করে নিলেও এ ধরনের উন্নত জাতের মুরগির পুরো উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগাতে অল্প পরিমাণে সুষম খাবার দেওয়া প্রয়োজন। চালের গুঁড়ো (৩০০ গ্রাম), খুদ বা গম ভাঙা (২৮০ গ্রাম), সর্ষে/ তিল খোল ( ২০০ গ্রাম), মাছ বা সোয়াবিন গুঁড়ো (২০০ গ্রাম), ভিটামিন ও খনিজ লবণ মিশ্রণ যেমন সাপ্লিভিট এম (২০ গ্রাম) মিশিয়ে মুরগির সংখ্যা অনুযায়ী মাথা পিছু ৫০-৭০ গ্রাম হিসাবে অর্ধেক সকালে ও অর্ধেক বিকালে খেতে দিতে হবে। রাতে মুরগি রাখার যে ঘর আছে, সেখানে নির্দিষ্ট পাত্রে জল ও খাবার দিতে হবে। যাতে সকালে ঘর থেকে বেরনো বা পরে ঘরে ঢোকার সময় ওই খাবার ও জল খাওয়া অভ্যাস তৈরি হয়। এই অভ্যাস থাকলে ওষুধ গুলে খাওয়াতে সুবিধা হয়। মুরগির খাবার সবসময় শুকনো ও পরিষ্কার রাখতে হবে। বেশি দিন জমা রাখলে ছত্রাক সংক্রমণ ঘটে।

সংকরায়ণ পদ্ধতিতে দেশি মুরগির সঙ্গে উন্নত মোরগ রেখে প্রাকৃতিক প্রজনন ঘটিয়ে দেশি মুরগির জিনগত উৎকর্ষতা বাড়ানো যায়। প্রতি ১০টি দেশি মুরগি পিছু ১টি উন্নত জাতের মোরগ রাখতে হবে। যে সংকর মুরগি জন্মাবে, তা দেশি মুরগির চেয়ে দ্রুত (৪-৫ মাস বয়সে) এবং প্রায় দ্বিগুণ (বছরে ১২০-১৪০টি) ডিম দেবে।

রোগব্যাধি মুরগি পালনের অন্যতম সমস্যা। তাই নিয়মিত মুরগির ঘর চুন বা জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। প্রতি মাসে একবার করে কৃমিনাশক ওষুধ (পাইপেরাজিন তরল বয়স অনুযায়ী ০.৫-১ মিলি) জলে গুলে খাওয়াতে হবে। রানিক্ষেত বা বসন্তের মতো কয়েকটি সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত টিকাকরণ জরুরি। টিকা দেওয়ার দশ দিন আগে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। টিকাকরণ বিশেষত রানিক্ষেত টিকা ৭-১০ দিন বয়সে নাকে বা চোখে এক ফোঁটা, ৩০ দিন বয়সে আর এক বার, ২ মাস বয়সে প্রথম কৃমির ওষুধ এবং আড়াই মাস বয়সে ডানার তলায় ০.৫ মিলি ইঞ্জেকশন অবশ্যই নিতে হবে। ঝিমুনি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট, পাতলা বা রক্ত পায়খানা নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাকট্রিম ডিএস বা সেপম্যাক্স (১টি বড়ি ১০টি বড় বা ২০টি বাচ্চা মুরগির জন্য) খাবারে বা জলে গুলে ড্রপারে করে খাইয়ে দিতে হবে (৩/৫/৭ দিন)।

দেশী মুরগি বাণিজ্যিকভাবে পালন:
দেশী মুরগি বানিজ্যিকভাবে পালন কৌশল আয় বৃদ্ধি ও পারিবারিক পুষ্টির নিশ্চয়তা বিধানে দেশী মুরগী প্রতিপালন বিশেষ অবদান রাখতে পারে । আমরা সবাই বলে থাকি দেশী মুরগির উৎপাদন কম । কিন্তু বিভিন্ন পর্যায়ে বিশেষ লক্ষ্য এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশী মুরগীর উৎপাদন দ্বিগুনের ও বেশী পাওয়া সম্ভব। দেশী মুরগি থেকে লাভ জনক উৎপাদন পওয়ায় বিভিন্ন কৌশল এখানে বর্ননা করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে দেশী মুরগির ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি করে বাজারে বিক্রি করার চেয়ে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরী করে ৮-১২ সপ্তাহ বয়সে বিক্রি করলে লাভ বেশী হয়। এক সংঙ্গে ১০-১২ টি মুরগি নিয়ে পালন শূরু করতে হবে। তবে কখনও ১৫-১৬ টির বেশী নেওয়া ঠিক না । তাতে অনেক অসুবিধাই হয় । শুরুতে মুরগি গুলোকে কৃমি নাষক ঔষধ খাওয়ানোর পরে রানীক্ষেত রোগের টীকা দিতে হবে। মুরগির গায়ে উকুন থাকলে তাও মেরে নিতে হবে। প্রতিটি মুরগিকে দিনে ৫০-৬০ গ্রাম হারে সুষম খাদ্য দিতে হবে। আজকাল বাজারে লেয়ার মুরগির সুষম খাদ্য পাওয়া যায় । তা ছাড়া আধা আবদ্ধ এ পদ্ধতিতে পালন করলে লাভ বেশী হয়।

মুরগির সাথে অবশ্যই একটি বড় আকারের মোরগ থাকতে হবে। তা না হলে ডিম ফুটানো যাবে না । ডিম পাড়া শেষ হলে মুরগি উমে আসবে । তখন ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটানোর ব্যবস্থা নিতে হয়।এক সঙ্গে একটি মুরগির নীচে ১২-১৪ টি ডিম বসানো যাবে। খামারের আদলে বাঁশ, কাঠ খড়, বিচলী তাল নারকেল সুপারির পাতা দিয়ে যত কম খরচে স্থানান্তর যোগ্য ঘর তৈরী করা সম্ভব তা করা যায়। ঘর তৈরীর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সঠিক মাপের হয় এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচল করতে পারে । বানানোর পর ঘরটিকে বাড়ীর সব চেয়ে নিরিবিলি স্থানে রাখতে হবে । মাটির উপর ইট দিয়ে তার উপর বসাতে হবে। তাহলে ঘর বেশী দিন টিকবে ।

ফুটানোর ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষনঃ- আরেকটি প্রয়োজনীয় ̧গুরুত্বপূর্ন কাজ। ডিম পাড়ার পর ডিম সসংগ্রহের সময় পেন্সিল দিয়ে ডিমের গায়ে তারিখ লিখে ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষন করতে হবে। ডিম পাড়া শেষ হলেই মুরগি কুঁচো হবে। গরম কালে ৫-৬ দিন বয়সের ডিম এবং শীত কালে ১০-১২ দিন বয়সের ডিম ফুটানোর জন্য নির্বাচন করতে হবে।

দেশী মুরগি পালন কৌশলের বিশেষ নজর দেয়ার ধাপ সমূহ:
উমে বসানো মুরগির পরিচর্যা করতে হবে। মুরগির সামনে পাত্রে সবসময় খাবার ও পানি দিয়ে রাখতে হবে যাতে সে ইচ্ছে করলেই খেতে পারে । তাহলে মুরগির ওজন হ্রাস পাবেনা এতে বাচ্চা তোলার পর আবার তাড়াতাড়ি ডিম পাড়া আরম্ভ করবে।

ডিম বসানোর ৭-৮ দিন পর আলোতে রাতের বেলা ডিম পরীক্ষা করলে বাচ্চা হয় নাই এমন ডিম ̧লো চেনা যাবে এবং বের করে অনতে হবে। বাচ্চা হওয়া ডিম ̧লো সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন মুরগি বিরক্ত না হয়।
প্রতিটি ডিমের গায়ে সমভাভে তাপ লাগার জন ̈ দিনে কমপেক্ষ ৫-৬ বার ওলট পালট করে দিতে হবে।
বাতাসের আর্দ্রতা কম হলে বিশেষ করে খুব গরম ও শীতের সময় ডিম উমে বসানোর ১৮- ২০দিন পর্যন্ত কুসুম গরম পানিতে হাতের আঙ্গুল ভিজিয়ে পানি স্প্রে করে দিতে হবে।
*ফোটার পর ৫-৬ ঘন্টা পর্যন্ত মাকে দিয়ে বাচ্চাকে উম দিতে হবে। তাতে বাচ্চা শুকিয়ে ঝরঝরে হবে।

বাচ্চা ফুটার পর বাচ্চার পরিচর্যা ও ডিম পাড়া মুরগির পরিচর্যা :- গরম কালে বাচ্চার বয়স ৩-৪ দিন এবং শীত কালে ১০-১২ দিন পর্যন্ত বাচ্চার সাথে মাকে থাকতে দিতে হবে। তখন মুরগি নিজেই বাচ্চাকে উম দিবে। এতে কৃত্রিম উমের (ব্রুডিং ) প্রয়োজন হবে না। এ সময় মা মুরগিকে খাবার দিতে হবে। মা মুরগির খাবারের সাথে বাচ্চার খাবার ও কিছূ আলাদা করে দিতে হবে।

বাচ্চা গুলো মায়ের সাথে খাবার খাওয়া শিখবে। উপরোক্ত বর্ণিত সময়ের পর মুরগিকে বাচ্চা থেকে আলাদা করতে হবে। এ অবস্থায় বাচ্চাকে কৃত্রিম ভাবে ব্রুডিং ও খাবার দিতে হবে। তখন থেকেই বাচ্চা পালনের মত বাচ্চা পালন পদ্ধতির সব কিছুই পালন করতে হবে। মা মুরগিকে আলাদা করে লেয়ার খাদ্য দিতে হবে। এ সময় মা মুরগিকে তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার জন্য পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিন দিতে হবে।

মা মুরগি ও বাচ্চা এমনভাবে আলাদা করতে হবে যেন তারা দৃষ্টির বাহিরে থাকে। এমন কি বাচ্চার চিচি শব্দ যেন মা মুরগি শুনতে না পায় । তা না হলে মা ও বাচ্চার ডাকা ডাকিতে কেউ কোন খাবার বা পানি কিছুই খাবে না । আলাদা করার পর অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে গেলে আর কোন সমস্য থাকে না ।প্রতিটি মুরগিকে এ সময় ৮০-৯০ গ্রাম লেয়ার খাবার দিতে হবে। সাথে সাথে ৫-৭ ঘন্টা চড়ে বেড়াতে দিতে হবে। প্রতি ৩-৪ মাস পর পর কৃমির ঔষধ এবং ৪-৫ মাস পর পর আর. ডি. ভি . টীকা দিতে হবে।

দেশে একটি মুরগি ডিম পাড়ার জন্য ২০ -২৪দিন সময় নেয় । ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য ২১ দিন সময় নেয় । বাচ্চা লালন পালন করে বড় করে তোলার জন্য ৯০-১১০ দিন সময় নেয় । ডিম থেকে এ ভাবে (৯০-১১০ দিন ) বাচ্চা বড় করা পর্যন্ত একটি দেশী মুরগির উৎপাদন চক্র শেষ করতে স্বাভাবিক অবস্থায় ১২০- ১৩০ দিন সময় লাগে।

কিন্তু মাকে বাচ্চা থেকে আলাদা করার ফলে এই উৎপাদন চক্র ৬০ -৬২ দিনের মধ্যে সমাপ্ত হয়। বাকি সময় মুরগিকে ডিম পাড়ার কাজে ব্যবহার করা যায় । এই পালন পদ্ধতিকে ক্রিপ ফিডিং বলে । * ক্রিপ ফিডিং পদ্ধতিতে বাচ্চা পালন করলে মুরগিকে বাচ্চা পালনে বেশী সময় ব্যায় করতে হয় না । ফলে ডিম পাড়ার জন্য মুরগি বেশী সময় দিতে পারে । এই পদ্ধতিতে বাচ্চা ফুটার সংখ্যা বেশী হয় । দেখা গেছে বাচ্চার মৃত্যুহারও অনেক কম থাকে। মোট কথা অনেক দিক দিয়েই লাভবান হওয়া যায় । এই পদ্ধতি বর্তমানে অনেকে ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছেন।

প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ১৮, ২০২২ ৪:৪৬ অপরাহ্ন
অধিক ডিম ও মাংস উৎপাদনে দেশী মুরগি পালন করবেন যেভাবে
পোলট্রি

বাংলাদেশের গ্রাম এলাকায় প্রায় প্রতিটি পরিবার দেশী মুরগি পালন করে থাকে। এদের উৎপাদন ক্ষমতা বিদেশী মুরগির চেয়ে কম। উৎপাদন ব্যয়ও অতি নগণ্য। এটি অধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। এদের মাংস ও ডিমের মূল্য বিদেশী মুরগীর তুলনায় দ্বিগুণ, এর চাহিদাও খুবই বেশী। দেশী মুরগির মৃত্যুহার বাচ্চা বয়সে অধিক এবং অপুষ্টিজনিত কারনে উৎপাদন আশানুরূপ নয়। বাচ্চা বয়সে দেশী মোরগ-মুরগির মৃত্যুহার কমিয়ে এনে সম্পূরক খাদ্যের ব্যবস্থা করলে দেশী মুরগি থেকে অধিক ডিম ও মাংস উৎপাদন করা সম্ভব।

উল্লেখিত অবস্থার আলোকে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট দেশী মুরগি উৎপাদনে উন্নত কৌশল শীর্ষক প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করেছে। এ কৌশল ব্যবহার করে খামারিরা দেশী মুরগি থেকে অধিক ডিম ও মাংস উৎপাদন করে পারিবারিক পুষ্টি ও আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে।

উদ্দেশ্য:
সম্পুরক খাদ্য, রানীক্ষেত ও বসন্তের প্রতিষেধক প্রদান করে এবং বন্য জন্তুর কবল থেকে মুক্ত রেখে দেশী মুরগি, বিশেষ করে ছোট বাচ্চার মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা যায়।
দেশী মুরগির দৈহিক ওজন ও ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি করা।

প্রযুক্তি ব্যবহারের পদ্ধতি:
প্রযুক্তিটি গ্রামীণ পর্যায়ে সকল গৃহস্থ পরিবারই ব্যবহার করতে পারবেন। খামারের আকার অনুযায়ী প্রত্যেক খামারীর জন্য মোরগ-মুরগির সংখ্যা

নিম্নে দেওয়া হলো-
খামারের আকার আবাদী জমির পরিমাণ (শতাংশ) মোরগ/মুরগি
ছোট ৫০ শতাংশ ১টি মোরগ ও ৩টি মুরগি
মাঝারী ও বড় ৫০ ও তার অধিক ১টি মোরগ ও ৬টি মুরগি

দেশীয় পদ্ধতিতে দেশি মোরগ পালন:
অনেকেই জানতে চেয়ে ছিলেন যে সল্প মূলধন দিয়ে কি ব্যবসা করা যায়। তাদের জন্য দেশি মোরগ হতে পারে একটি সময়পযোগি ব্যবসা। সল্প জায়গায় অল্প টাকা বিনিয়োগ করে সল্প সময়ে অধিক আয় করা যায়। বসত বাড়িতে মুরগি চাষ হচ্ছে একটি সহজ এবং লাভজনক কাজ। বাড়ির গৃহিণীরা খামার স্থাপন ও পরিচালনা করতে পারে। একটি মোরগ একটি মুরগির তুলনায় দ্রুত বাড়ে আর বাজারে দেশি মোরগের প্রচুর চাহিদা থাকায় মোরগ বিক্রি করতে তেমন বেগ পেতে হয়না এবং বাজারে ভাল দাম ও পাওয়া যায়।

দেশি মোরগ আবদ্ধ ও ছেড়ে পালন করা যায়। তবে ছেড়ে পালন করলে বেশি লাভবান হওয়া যায় কারন মোরগ নিজের খাদ্য নিজে কুড়িয়ে খায়।এরা মুক্ত আলো বাতাস বিশেষ করে প্রচুর সূর্য কিরণে বেড়ে উঠে যা তাদের শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি করতে সাহায্য করে। এদের খাবারের জন্য তেমন কোন খরচ করতে হয় না।

মোরগ নির্বাচনঃ- দেশি মোরগ বা মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের জন্য তেমন কোন হ্যাচারি গড়ে ওঠেনি তাই নিজেকে ই দেখে শুনে সুস্থ সবল ও নিরোগ মোরগ সংগ্রহ করতে হবে। মূলত ৪০০-৬০০ গ্রামের মোরগ দিয়ে শুরু করলে ভাল ফলাফল আশা করা যায়। কারন ঐ সময়ের পর মোরগ গুলো দ্রুত বাড়ে এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা পেলে ২ মাস পর মোরগ গুলোর গড় ওজন ২ কেজির উপর হবে। প্রতি কিলো দেশি মোরগের মূল্য কেমন আছে সেটা নাই বা বললাম। আপনারা নিজেরা লাভ-ক্ষতি বের করে নিন।

মুরগির ঘর তৈরির নিয়মঃ- মোরগের জন্য খোলামেলা ঘর হতে হবে। ১.৫ মিটার (৫ ফুট) লম্বা X১.২ মিটার (৪ ফুট) চওড়া এবং ১ মিটার (৩.৫ ফুট) উঁচু ঘর তৈরি করতে হবে। ঘরের বেড়া বাঁশের তরজা বা কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি করতে হবে। এছাড়া মাটির দেয়ালও তৈরি করা যাবে। বেড়া বা দেওয়ালে আলো বাতাস চলাচলের জন্য ছিদ্র থাকতে হবে। ঘরের চাল খড়, টিন বা বাঁশের তরজার সাথে পলিথিন ব্যবহার করে তৈরি করা যাবে। এরকম ঘরে ১০-১৫টি মোরগ পালন করা যায়।

খাবারঃ- বাড়ির প্রতিদিনের বাড়তি বা বাসী খাদ্য যেমন ফেলে দেওয়া এঁটোভাত, তরকারি,
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গম, ধান, পোকামাকড়, শাক সবজির ফেলে দেওয়া অংশ, ঘাস, লাতা পাতা, কাঁকর, পাথর কুচি ইত্যাদি মুরগি কুড়িয়ে খায়।

পরিচর্যাঃ- ছেড়ে পালন পদ্ধতিতে মুরগি পরিচর্যার জন্য সময় বা লোকজনের তেমন দরকার পড়ে না। তারপরও কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়। সকালে মুরগির ঘর খুলে কিছু খাবার দিতে হবে। সন্ধ্যায় মুরগি ঘরে ওঠার আগে আবার কিছু খাবার দিতে হবে। ঘরে উঠলে দরজা বন্ধ করে দিতে হবে।মুরগির পায়খানা ঘরের মেঝেতে যেন লেপ্টে না যায় সেজন্য ঘরের মেঝেতে ধানের তুষ, করাতের গুঁড়া ২.৫ সে.মি. (১ ইঞ্চি) পুরু করে বিছাতে হবে। পায়খানা জমতে জমতে শক্ত জমাট বেঁধে গেলে বারবার তা উলট-পালট করে দিতে হবে এবং কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করতে হবে। এ পদ্ধতিতে দেশি মোরগ পালন করা গেলে প্রায় তেমন কোন খরচ ছাড়াই ভাল একটা মুনাফা পাওয়া যাবে।

দেশি মুরগি পালনে যত্ন নিতে হবে:
সাকুল্যে ৫-১০টি মুরগি। বাড়ির আশপাশে চরে বেড়িয়ে বাড়ির উচ্ছিষ্ট খাবার, পোকামাকড়, কেঁচো, কচি ঘাসপাতা খায় তারা। সে অর্থে প্রতিপালনের কোনও খরচ নেই বললে চলে। আপাতদৃষ্টিতে লাভজনক মনে হলেও আসলে অতটা লাভ হয় না। ছাড়া মুরগি অন্যত্র ডিম পেড়ে আসে, কখনও রোগে মারা যায়। তাই দেশি মুরগির পালন লাভজনক করতে হলে কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার, সে জাত নির্বাচনেই হোক বা রোগ পরিচর্যায়।

প্রথমে আসি মুরগির জাতে। ব্রয়লার খামারের হাইব্রিড মুরগি উঠোনে ছেড়ে পালন করা যায় না। তাই খাঁটি জাতগুলোকে বাছতে হবে। যেমন, রোড আইল্যান্ড রেড (আরআইআর) বা ব্ল্যাক অস্ট্রালর্প। রঘুনাথপুর, বালুরঘাটের রাজ্য মুরগি খামারে লাল বা আরআইআর এবং কালো বা ব্ল্যাক অস্ট্রালর্প মুরগির বাচ্চা পাওয়া যায়। ইদানীং কালে বনরাজা, গিরিরাজা, গ্রামরপ্রিয়া ইত্যাদি জাত কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হয়েছে।

মুরগি রাতে রাখার জন্য ঘর বানাতে হবে। মাটি থেকে সামান্য উপরে বাঁশ বা কাঠ দিয়ে কম খরচে খড় বা টালি ঢেকে তৈরি ঘরগুলো যেন শুকনো, পরিষ্কার হয়। আর আলো-বাতাস খেলে। প্রতিটি পাখির জন্য গড়ে তিন বর্গফুট জায়গা ধরতে হবে।

দেশি মুরগি চরে বেড়িয়ে তার খাবার সংগ্রহ করে নিলেও এ ধরনের উন্নত জাতের মুরগির পুরো উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগাতে অল্প পরিমাণে সুষম খাবার দেওয়া প্রয়োজন। চালের গুঁড়ো (৩০০ গ্রাম), খুদ বা গম ভাঙা (২৮০ গ্রাম), সর্ষে/ তিল খোল ( ২০০ গ্রাম), মাছ বা সোয়াবিন গুঁড়ো (২০০ গ্রাম), ভিটামিন ও খনিজ লবণ মিশ্রণ যেমন সাপ্লিভিট এম (২০ গ্রাম) মিশিয়ে মুরগির সংখ্যা অনুযায়ী মাথা পিছু ৫০-৭০ গ্রাম হিসাবে অর্ধেক সকালে ও অর্ধেক বিকালে খেতে দিতে হবে। রাতে মুরগি রাখার যে ঘর আছে, সেখানে নির্দিষ্ট পাত্রে জল ও খাবার দিতে হবে। যাতে সকালে ঘর থেকে বেরনো বা পরে ঘরে ঢোকার সময় ওই খাবার ও জল খাওয়া অভ্যাস তৈরি হয়। এই অভ্যাস থাকলে ওষুধ গুলে খাওয়াতে সুবিধা হয়। মুরগির খাবার সবসময় শুকনো ও পরিষ্কার রাখতে হবে। বেশি দিন জমা রাখলে ছত্রাক সংক্রমণ ঘটে।

সংকরায়ণ পদ্ধতিতে দেশি মুরগির সঙ্গে উন্নত মোরগ রেখে প্রাকৃতিক প্রজনন ঘটিয়ে দেশি মুরগির জিনগত উৎকর্ষতা বাড়ানো যায়। প্রতি ১০টি দেশি মুরগি পিছু ১টি উন্নত জাতের মোরগ রাখতে হবে। যে সংকর মুরগি জন্মাবে, তা দেশি মুরগির চেয়ে দ্রুত (৪-৫ মাস বয়সে) এবং প্রায় দ্বিগুণ (বছরে ১২০-১৪০টি) ডিম দেবে।

রোগব্যাধি মুরগি পালনের অন্যতম সমস্যা। তাই নিয়মিত মুরগির ঘর চুন বা জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। প্রতি মাসে একবার করে কৃমিনাশক ওষুধ (পাইপেরাজিন তরল বয়স অনুযায়ী ০.৫-১ মিলি) জলে গুলে খাওয়াতে হবে। রানিক্ষেত বা বসন্তের মতো কয়েকটি সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত টিকাকরণ জরুরি। টিকা দেওয়ার দশ দিন আগে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। টিকাকরণ বিশেষত রানিক্ষেত টিকা ৭-১০ দিন বয়সে নাকে বা চোখে এক ফোঁটা, ৩০ দিন বয়সে আর এক বার, ২ মাস বয়সে প্রথম কৃমির ওষুধ এবং আড়াই মাস বয়সে ডানার তলায় ০.৫ মিলি ইঞ্জেকশন অবশ্যই নিতে হবে। ঝিমুনি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট, পাতলা বা রক্ত পায়খানা নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাকট্রিম ডিএস বা সেপম্যাক্স (১টি বড়ি ১০টি বড় বা ২০টি বাচ্চা মুরগির জন্য) খাবারে বা জলে গুলে ড্রপারে করে খাইয়ে দিতে হবে (৩/৫/৭ দিন)।

দেশী মুরগি বাণিজ্যিকভাবে পালন:
দেশী মুরগি বানিজ্যিকভাবে পালন কৌশল আয় বৃদ্ধি ও পারিবারিক পুষ্টির নিশ্চয়তা বিধানে দেশী মুরগী প্রতিপালন বিশেষ অবদান রাখতে পারে । আমরা সবাই বলে থাকি দেশী মুরগির উৎপাদন কম । কিন্তু বিভিন্ন পর্যায়ে বিশেষ লক্ষ্য এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশী মুরগীর উৎপাদন দ্বিগুনের ও বেশী পাওয়া সম্ভব। দেশী মুরগি থেকে লাভ জনক উৎপাদন পওয়ায় বিভিন্ন কৌশল এখানে বর্ননা করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে দেশী মুরগির ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি করে বাজারে বিক্রি করার চেয়ে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরী করে ৮-১২ সপ্তাহ বয়সে বিক্রি করলে লাভ বেশী হয়। এক সংঙ্গে ১০-১২ টি মুরগি নিয়ে পালন শূরু করতে হবে। তবে কখনও ১৫-১৬ টির বেশী নেওয়া ঠিক না । তাতে অনেক অসুবিধাই হয় । শুরুতে মুরগি গুলোকে কৃমি নাষক ঔষধ খাওয়ানোর পরে রানীক্ষেত রোগের টীকা দিতে হবে। মুরগির গায়ে উকুন থাকলে তাও মেরে নিতে হবে। প্রতিটি মুরগিকে দিনে ৫০-৬০ গ্রাম হারে সুষম খাদ্য দিতে হবে। আজকাল বাজারে লেয়ার মুরগির সুষম খাদ্য পাওয়া যায় । তা ছাড়া আধা আবদ্ধ এ পদ্ধতিতে পালন করলে লাভ বেশী হয়।

মুরগির সাথে অবশ্যই একটি বড় আকারের মোরগ থাকতে হবে। তা না হলে ডিম ফুটানো যাবে না । ডিম পাড়া শেষ হলে মুরগি উমে আসবে । তখন ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটানোর ব্যবস্থা নিতে হয়।এক সঙ্গে একটি মুরগির নীচে ১২-১৪ টি ডিম বসানো যাবে। খামারের আদলে বাঁশ, কাঠ খড়, বিচলী তাল নারকেল সুপারির পাতা দিয়ে যত কম খরচে স্থানান্তর যোগ্য ঘর তৈরী করা সম্ভব তা করা যায়। ঘর তৈরীর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সঠিক মাপের হয় এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচল করতে পারে । বানানোর পর ঘরটিকে বাড়ীর সব চেয়ে নিরিবিলি স্থানে রাখতে হবে । মাটির উপর ইট দিয়ে তার উপর বসাতে হবে। তাহলে ঘর বেশী দিন টিকবে ।

ফুটানোর ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষনঃ- আরেকটি প্রয়োজনীয় ̧গুরুত্বপূর্ন কাজ। ডিম পাড়ার পর ডিম সসংগ্রহের সময় পেন্সিল দিয়ে ডিমের গায়ে তারিখ লিখে ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষন করতে হবে। ডিম পাড়া শেষ হলেই মুরগি কুঁচো হবে। গরম কালে ৫-৬ দিন বয়সের ডিম এবং শীত কালে ১০-১২ দিন বয়সের ডিম ফুটানোর জন্য নির্বাচন করতে হবে।

দেশী মুরগি পালন কৌশলের বিশেষ নজর দেয়ার ধাপ সমূহ:
উমে বসানো মুরগির পরিচর্যা করতে হবে। মুরগির সামনে পাত্রে সবসময় খাবার ও পানি দিয়ে রাখতে হবে যাতে সে ইচ্ছে করলেই খেতে পারে । তাহলে মুরগির ওজন হ্রাস পাবেনা এতে বাচ্চা তোলার পর আবার তাড়াতাড়ি ডিম পাড়া আরম্ভ করবে।

ডিম বসানোর ৭-৮ দিন পর আলোতে রাতের বেলা ডিম পরীক্ষা করলে বাচ্চা হয় নাই এমন ডিম ̧লো চেনা যাবে এবং বের করে অনতে হবে। বাচ্চা হওয়া ডিম ̧লো সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন মুরগি বিরক্ত না হয়।
প্রতিটি ডিমের গায়ে সমভাভে তাপ লাগার জন ̈ দিনে কমপেক্ষ ৫-৬ বার ওলট পালট করে দিতে হবে।
বাতাসের আর্দ্রতা কম হলে বিশেষ করে খুব গরম ও শীতের সময় ডিম উমে বসানোর ১৮- ২০দিন পর্যন্ত কুসুম গরম পানিতে হাতের আঙ্গুল ভিজিয়ে পানি স্প্রে করে দিতে হবে।
*ফোটার পর ৫-৬ ঘন্টা পর্যন্ত মাকে দিয়ে বাচ্চাকে উম দিতে হবে। তাতে বাচ্চা শুকিয়ে ঝরঝরে হবে।

বাচ্চা ফুটার পর বাচ্চার পরিচর্যা ও ডিম পাড়া মুরগির পরিচর্যা :- গরম কালে বাচ্চার বয়স ৩-৪ দিন এবং শীত কালে ১০-১২ দিন পর্যন্ত বাচ্চার সাথে মাকে থাকতে দিতে হবে। তখন মুরগি নিজেই বাচ্চাকে উম দিবে। এতে কৃত্রিম উমের (ব্রুডিং ) প্রয়োজন হবে না। এ সময় মা মুরগিকে খাবার দিতে হবে। মা মুরগির খাবারের সাথে বাচ্চার খাবার ও কিছূ আলাদা করে দিতে হবে।

বাচ্চা গুলো মায়ের সাথে খাবার খাওয়া শিখবে। উপরোক্ত বর্ণিত সময়ের পর মুরগিকে বাচ্চা থেকে আলাদা করতে হবে। এ অবস্থায় বাচ্চাকে কৃত্রিম ভাবে ব্রুডিং ও খাবার দিতে হবে। তখন থেকেই বাচ্চা পালনের মত বাচ্চা পালন পদ্ধতির সব কিছুই পালন করতে হবে। মা মুরগিকে আলাদা করে লেয়ার খাদ্য দিতে হবে। এ সময় মা মুরগিকে তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার জন্য পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিন দিতে হবে।

মা মুরগি ও বাচ্চা এমনভাবে আলাদা করতে হবে যেন তারা দৃষ্টির বাহিরে থাকে। এমন কি বাচ্চার চিচি শব্দ যেন মা মুরগি শুনতে না পায় । তা না হলে মা ও বাচ্চার ডাকা ডাকিতে কেউ কোন খাবার বা পানি কিছুই খাবে না । আলাদা করার পর অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে গেলে আর কোন সমস্য থাকে না ।প্রতিটি মুরগিকে এ সময় ৮০-৯০ গ্রাম লেয়ার খাবার দিতে হবে। সাথে সাথে ৫-৭ ঘন্টা চড়ে বেড়াতে দিতে হবে। প্রতি ৩-৪ মাস পর পর কৃমির ঔষধ এবং ৪-৫ মাস পর পর আর. ডি. ভি . টীকা দিতে হবে।

দেশে একটি মুরগি ডিম পাড়ার জন্য ২০ -২৪দিন সময় নেয় । ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর জন্য ২১ দিন সময় নেয় । বাচ্চা লালন পালন করে বড় করে তোলার জন্য ৯০-১১০ দিন সময় নেয় । ডিম থেকে এ ভাবে (৯০-১১০ দিন ) বাচ্চা বড় করা পর্যন্ত একটি দেশী মুরগির উৎপাদন চক্র শেষ করতে স্বাভাবিক অবস্থায় ১২০- ১৩০ দিন সময় লাগে।

কিন্তু মাকে বাচ্চা থেকে আলাদা করার ফলে এই উৎপাদন চক্র ৬০ -৬২ দিনের মধ্যে সমাপ্ত হয়। বাকি সময় মুরগিকে ডিম পাড়ার কাজে ব্যবহার করা যায় । এই পালন পদ্ধতিকে ক্রিপ ফিডিং বলে । * ক্রিপ ফিডিং পদ্ধতিতে বাচ্চা পালন করলে মুরগিকে বাচ্চা পালনে বেশী সময় ব্যায় করতে হয় না । ফলে ডিম পাড়ার জন্য মুরগি বেশী সময় দিতে পারে । এই পদ্ধতিতে বাচ্চা ফুটার সংখ্যা বেশী হয় । দেখা গেছে বাচ্চার মৃত্যুহারও অনেক কম থাকে। মোট কথা অনেক দিক দিয়েই লাভবান হওয়া যায় । এই পদ্ধতি বর্তমানে অনেকে ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছেন।

প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ১৮, ২০২২ ২:৩১ অপরাহ্ন
গবাদিপশুকে কৃমি মুক্ত রাখার উপায়
এগ্রিবিজনেস

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গবাদিপশু পালন লাভজনক ও বেকার সমস্যা সমাধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হওয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু আমাদের খামারিরা গবাদিপশু পালন করতে গিয়ে একটি সমস্যার সম্মুখীন হয়, তা হলো পরজীবী বা কৃমি। কৃমি এক ধরনের পরজীবী যা পশুর ওপর নির্ভর করে জীবন ধারণ করে। তারা পশুর অন্ত্রে, ফুসফুসে, লিভারে, চোখে, চামড়ায় বাস করে ও পশুর হজমকৃত খাবারে ভাগ বসিয়ে পশুর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। অনেক কৃমি পশুর রক্ত চুষে ও আমিষ খেয়ে পশুকে দুর্বল ও স্বাস্থ্যহীন করে ফেলে।

পরজীবী সাধারণত দুই ধরনের-
১. দেহের ভেতরের পরজীবী
২. দেহের বাইরের পরজীবী।

একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের প্রাণিসম্পদ হাসপাতালগুলোতে গত বছর (২০১০) বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত গবাদিপশুর (গরু, ছাগল, ভেড়া) মধ্যে ৫১.৩৬ ভাগ কৃমি বা পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত। এর মধ্যে আক্রান্ত গরুর মধ্যে ৬৮.৯২ ভাগ, আক্রান্ত গাভীর মধ্যে ৪৫.১৬ ভাগ, বাছুরের মধ্যে ৫০.০৭ ভাগ, ভেড়ার মধ্যে ৬১.৬৬ ভাগ এবং আক্রান্ত ছাগলের মধ্যে ৩৪.৭৯ ভাগ বিভিন্ন কৃমি বা পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হয়। সুতরাং কৃমি বা পরজীবী আমাদের গবাদিপশু পালনের প্রধান শত্রু। কৃমি বা পরজীবীগুলো হচ্ছে কলিজাকৃমি, পাতাকৃমি, গোলকৃমি, রক্তকৃমি, ফিতাকৃমি, প্রটোজয়া ও বিভিন্ন ধরনের বহিঃপরজীবী উকুন, আঠালী, মাইট ইত্যাদি গবাদিপশুকে আক্রান্ত করে। কৃমির কারণে গাভীর দুগ্ধ উত্পাদন ক্ষমতা কমে যায় অস্বাভাবিকভাবে এবং বাছুরগুলো পেট ফুলে গিয়ে স্বাস্থ্যহীন হয়ে পড়ে। ফলে দুগ্ধ ও মাংস উত্পাদন ক্ষমতা মারাক্তকভাবে ব্যাহত হয়। এর কারণে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস গবাদিপশুকে আক্রান্ত করার পরিবেশ তৈরি করে।

গবাদিপশুকে কৃমি বা পরজীবী থেকে মুক্ত রাখার উপায়গুলো হচ্ছে-
১) গবাদিপশুর বাসস্থানের জন্য নির্ধারিত স্থানের মাটি শুষ্ক ও আশপাশের জমি থেকে উঁচু হওয়া প্রয়োজন। সম্ভব হলে নদীনালা, খালবিল, হাওর-বাঁওড় থেকে দূরে করতে হবে।
২) গবাদিপশুর খামারের আশপাশে যেন বৃষ্টির পানি এবং অন্যান্য বর্জ্য জমে না থাকে ।
৩) খামারের জন্য নির্ধারিত স্থানের মাটিতে বালির ভাগ বেশি হওয়া প্রয়োজন যেন বর্ষাকালে খামারের মেঝে কর্দমাক্ত না হয় ।
৪) পশুর মলমূত্র ও আবর্জনা অল্প সময় পরপর পরিষ্কার করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ঘরে মলমূত্র ও আবর্জনা জমা না থাকে।
৫) খামারের অনেক দূরে পশুর মলমূত্র ও আবর্জনা পুঁতে রাখতে হবে।
৬) গবাদিপশুর বাসস্থান প্রতিদিন আদর্শ ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে এবং জীবাণুনাশক মেশানো পানি দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
৭) তিন মাস অন্তর গবাদিপশুকে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।

কলিজাকৃমি, পাতাকৃমি, গোলকৃমি, রক্তকৃমি, ফিতাকৃমি দ্বারা আক্রান্ত পশুকে অ্যালবেনডাজল ইউএসপি ৬০০ মি.গ্রা., হেক্সাক্লোরোফেন ইউএসপি ১ গ্রাম, লিভামিসোল হাইড্রোক্লোরাইড বিপি ৬০০ মি.গ্রা. এবং ট্রাইক্লাবেন্ডাজল আইএনএস ৯০০ মি.গ্রা. জাতীয় ওষুধ ভালো কাজ করে। কর্কসিডিয়াতে সালফোনামাইডস, স্ট্রেপটোমাইসিন ও মেট্রোনিডাজল ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।ট্রিপানোসোমা ও ব্যাবেসিওসিস তে ব্যাবকপ খাওয়ালে রোগ ভালো হয়। উঁকুন, আঠালী ও মাইটে আক্রান্ত গবাদিপশুর শরীরে আইভারমেকটিন, সেভিন, নেগুভান ইত্যাদি ওষুধ ব্যবহার করলে ওইসব পরজীবী থেকে গবাদিপশুকে রক্ষা করা যায়।পরিশেষে আমাদের গবাদিপশুকে কৃমি বা পরজীবীমুক্ত রাখতে পারলে আমরা দুগ্ধ ও মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যে পৌঁছাব।

প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ১৭, ২০২২ ১১:২৯ পূর্বাহ্ন
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মাংস উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
প্রাণিসম্পদ

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় মাংস উৎপাদনে এখন আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

‌বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরস্থ পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত ‘প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী, ২০২২’ এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও টাংগাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ছোট মনির, ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্, মহাপুলিশ পরিদর্শক বেনজীর আহমেদ এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ। বক্তব্য প্রদান করেন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. আব্দুর রহিম।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অন্যান্য দপ্তর-সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, প্রাণিসম্পদ খাতের বিজ্ঞানী-গবেষক, উদ্যোক্তা ও খামারিগণ সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আরো বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে মাংস উৎপাদনে এখন আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। মাংস আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে যাচ্ছি। এখন ভারত-মিয়ানমার থেকে কোরবানির পশু আমদানি করতে হয় না। বেকাররা এখন খামার করে গর্বের সাথে বলেন আমরা খামারি”।

তিনি আরো বলেন, “দেশব্যাপী প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী করায় মানুষের মধ্যে প্রাণিসম্পদ খাত নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা,  সৃষ্টি হয়েছেঅনুপ্রেরণা। এটা সম্ভব হয়েছে প্রাণিসম্পদ খাতবান্ধব সরকার প্রধান শেখ হাসিনার কারণে”।

মন্ত্রী আরো বলেন, “একটা সময় মানুষ সপ্তাহে একবার মাংস খেতে পারত না। এখন কোন কোন পরিবার দিনে তিন বেলা মাংস খায়। দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের এ বৈপ্লবিক পরিবর্তন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তন। এ পরিবর্তনের সূচনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি সর্বপ্রথম বিদেশ থেকে উন্নত জাতের গবাদিপশু দেশে নিয়ে এসেছেন। গবাদি পশুতে কৃত্রিম প্রজনন প্রবর্তন করেছেন”।

প্রধান অতিথি আরো বলেন, “বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর কৃষি,মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতকে সামনের দিকে নিয়ে আসার জন্য সব ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। কারণ তিনি কৃষক ও কৃষি বান্ধব সরকার প্রধান। একটা সময় বিদ্যুতের দাবিতে কৃষকদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। আর এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি, লাইভস্টক ও ডেইরি খাতে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা দিচ্ছেন। এর ফলে আজ বিকশিত বাংলাদেশ। এর ফলে আজ প্রাণিসম্পদের বিশাল সম্ভাবনাময় জগৎ আমরা সৃষ্টি করতে পেরেছি”।

প্রাণিসম্পদ খাতে বিদ্যমান সব সমস্যা সমাধানে সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে বলেও এসময় জানান মন্ত্রী।

প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৬১টি জেলার ৪৬৬টি উপজেলায় এ প্রদর্শনী দিনব্যাপী একযোগে অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকায় অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় প্রদর্শনীতে ভিন্ন ভিন্ন ভ্যালু চেইনভিত্তিক ১১০টি স্টল স্থাপন করা হয়। এসব স্টলে উন্নত জাতের এবং অধিক উৎপাদনশীল গবাদিপশুসহ বিভিন্ন প্রাণী তথা গাভী, বাছুর, ষাঁড়, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, মুরগী, হাঁস, দুম্বা, কবুতর ইত্যাদি প্রদর্শন করা হয়। এছাড়াও প্রদর্শনীতে প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রযুক্তি, ঔষধ সামগ্রী, টিকা, প্রাণিজাত পণ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণ সরঞ্জাম, মোড়কসহ পণ্য বাজারজাতকরণ প্রযুক্তির স্টলও স্থাপন করা হয়।

প্রদর্শনীতে বিচারক প্যানেলের সামনে র‌্যাম্পের উপর দিয়ে গবাদিপশুর হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য ছিল দেখার মতো। গুণ, মান, জাত, স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য্য, আকার, অবদান, নিরাপদতা, কর্মসংস্থান, বাজারজাতকরণ, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক প্রভাবসহ সার্বিক পর্যবেক্ষণ বিবেচনায় ১১টি ক্যাটাগরিতে খামারিদের মোট ৩১টি স্টলকে পুরস্কৃত করা হয়।

প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২২ ৩:৪৬ অপরাহ্ন
সোনালি মুরগির অধিক ডিম পেতে যা করবেন খামারী
পোলট্রি

আমাদের দেশে মুরগির মাংস এবং ডিমের চাহিদা ব্যাপক। এই মুরগির মাংস এবং ডিমের চাহিদা পূরণে গড়ে উঠেছে নানান মুরগির খামার। আর এসব খামারের মধ্যে অন্যতম হলো সোনালি মুরগির খামার। যা অনেক আগ থেকেই আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে পালন করা হচ্ছে। এরমধ্যে অনেকে কেবল ডিমের চাহিদা পূরণেও এই সোনালি মুরগির খামার করে থাকেন।

ডিম উৎপাদনের জন্য সোনালী মুরগি পালনে যা করা জরুরীঃ

সোনালি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে শুরুতেই মনে রাখতে হবে এটি একটি ব্যবসা। আর ব্যবসাকে হেলার চোখে দেখার কিছু নেই। সোনালী মুরগি পালনে উদাসীনতা দেখালে মুরগি পালনে লোকসান দেখা দিতে পারে। সেজন্য সোনালি মুরগি পালনের প্রতিটি পদক্ষেপ গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। সোনালীর ক্ষেত্রে ব্রূডিং এর সময় “এস্পারজিলোসিস” হবার অনেক সম্ভবনা থাকে। সেজন্য মুরগির ব্রূডিং কালে লিটারে তুঁতের পানি ছিটিয়ে ব্রূডিং করাতে হবে। এতে ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

সোনালি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে অনেক খামারিরা ভ্যাকসিন প্রদান নিয়ে অনেকটা উদাসীনতা দেখায়। সময়মতো মুরগিকে ভ্যাকসিন দিনে না পারলে অনেক সময় খামারিদের লোকসানে পড়তে হয়। আর সেজন্য ভ্যাকসিনসূচী অনুযায়ী ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে।সোনালি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে লেয়ার মুরগির মতোই আলোকসূচি মেনে চলতে হবে। লেয়ার মুরগির মতোই সোনালি মুরগিতে আলোক নিয়ম মানলে সবচেয়ে ভাল হয়।

সোনালি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে মুরগির বয়স ৮ থেকে ১০ সপ্তাহ হলে পুরুষ ও স্ত্রী সোনালী মুরগীগুলোকে পৃথক করতে হবে। সাধারনত মুরগী গুলোর ঝুটি ও পালক দেখেই পুরুষ ও স্ত্রী সোনালী মুরগী চেনা যায়। যেহেতু আপনার উদ্দেশ্য ডিম উৎপাদন তাই পুরুষ গুলো রাখার কোন প্রয়োজন নেই।সোনালী মুরগি সাধারনত দিনে ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম খাবার গ্রহন করে। অতিরিক্ত বা কম খাবার দেয়া কোনটিই ঠিক না। এক্ষেত্রে মোট খাদ্যের ৬০% সকালে দিয়ে দিতে হবে। আর বাকি ৪০% খাবার ২০% -২০% করে দুপুরে ও বিকেলে দিতে হবে।

খামারের মুরগিগুলোর বয়স ১৪ থেকে ১৬ সপ্তাহ হলে মুরগীগুলোকে খাঁচায় তুলতে হবে। মেঝেতে মুরগিগুলোকে না রেখে খাঁচায় রাখলে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়।

প্রকাশ : নভেম্বর ১২, ২০২১ ১২:৩৫ অপরাহ্ন
লাকসামে শিয়ালের মাংস বিক্রি
প্রাণ ও প্রকৃতি

কুমিল্লার লাকসামে প্রকাশ্যে শিয়াল জবাই করে মাংস বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার (১০ নভেম্বর) বিকালে কয়েকজন যুবক লাকসামের দৌলতগঞ্জ রাজঘাট সংলগ্ন নতুন বাজারে শিয়ালের মাংস বিক্রি করেন। এ সময় বিক্রেতারা শিয়ালের মাংসের নানা উপকারিতার কথা উল্লেখ করে প্রতি কেজি ১০০০ টাকা দরে বিক্রি করেন।

শিয়ালের মাংস বিক্রেতা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই দিন দুপুরে দৌলতগঞ্জ বাজার রাজঘাট ব্রিজ সংলগ্ন নতুন বাজারে শিয়ালটি জবাই করার জন্য স্থানীয় এক কশাইকে ১৫০ টাকা দেওয়া হয়। জবাইয়ের আধা ঘণ্টার মধ্যে মাংস বিক্রি শেষ হয়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাংস ক্রয় করা ব্যক্তিরা জানান, মাংস বিক্রেতারা বলেছিলেন বাত-ব্যথা কিংবা কঠিন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে শিয়ালের মাংস রান্না করে খাওয়ার বিকল্প নেই। এ সব ক্ষেত্রে শিয়ালের মাংসই অব্যর্থ ওষুধ। তাদের এসব কথা বিশ্বাস করে মাংস ক্রয় করেন তারা।

স্থানীয় কাউন্সিলর আবদুল আজিজের কাছে শিয়াল জবাই ও মাংস বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম সাইফুল আলম বলেন, বন্যপ্রাণী জবাই করে মাংস বিক্রি করা আইনত দ–নীয় অপরাধ। তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রকাশ : নভেম্বর ১, ২০২১ ৭:৪২ অপরাহ্ন
মাংস ও দুধের চাহিদা পূরণে হরিয়ানা থেকে আসছে মহিষ
প্রাণিসম্পদ

দেশের মাংস ও দুধের চাহিদা পূরণে ভারতের হরিয়ানা রাজ্য থেকে মুররাহ প্রজাতির ১৬০টি মহিষ আনছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। চলতি মাসেই একটি কারিগরি কমিটি প্রাক-জাহাজীকরণ পরিদর্শনে (পিএসআই) ভারত যাবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আমাদের দেশে বর্তমানে যে মহিষের জাত রয়েছে তা বছরে বাচ্চা প্রসবের পরে প্রায় ৩০০ দিনে ৪০০-৫০০ লিটার দুধ দিয়ে থাকে আর হরিয়ানা রাজ্যের মুররাহ জাতের মহিষ ৩০০ দিনে প্রায় ২০০০-২৫০০ ক্ষেত্র বিশেষে ৩০০০ লিটার পর্যন্ত দুধ দিয়ে থাকে।

এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা বলেন, বর্তমান সরকার দেশে মাংস ও দুধ উৎপাদনে জোর দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দুধ ও মাংসের যোগান নিশ্চিত করার জন্য ভারত থেকে ভালো জাতের মহিষ সংগ্রহ করা হচ্ছে। আশাকরি আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে আমরা এসব মহিষ হাতে পাবো।করোনার কারণে আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও এখন পুরোদমে কাজ চলছে। চলতি মাসের যে কোনো সময়ে আমাদের একটা টিম পশু দেখতে যাওয়ার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ডা. মো.মুহসীন তরফদার রাজু বলেন, মহিষ উন্নয়ন প্রকল্পের (২য় পর্যায়)’ মাধ্যমে সরকারি মহিষ খামারসহ (সাভার, ঢাকা, সন্তোষ, টাঙ্গাইল এবং বাগেরহাট) দেশের মোট ২০০টি উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভালো জাতের (মুররাহ) মহিষ ভারত থেকে সংগ্রহ করা হবে। ইতিমধ্যে সকল কাজ সম্পন্ন করা হলেও করোনার কারণে আমদানি করা সম্ভব হয়নি। এখন নতুন করে সকল কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে আশাকরি মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে মহিষ দেশে আসবে।

তিনি আরও বলেন, মুররাহ জাতের এ মহিষ বছরে ৩০০ দিন পর্যন্ত দুধ দিতে অভ্যস্ত। গড়ে এরা প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কেজি দুধ দেয়। আমরা ভারত থেকে ১০টি পুরুষ এবং ১৫০টি স্ত্রী মহিষ আনবো। তবে আমাদের আমদানি বিষয়ক কার্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি স্ত্রী মহিষের সঙ্গে একটি করে বাচ্চাও থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে ভারত থেকে আসছে ৩১০টি মহিষ।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে উৎপাদিত দুধের ৯০ শতাংশ দুধ আসে গরু থেকে, আট শতাংশ আসে ছাগল থেকে এবং দুই শতাংশ আসে মহিষ থেকে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে দুধের উৎপাদন ছিল ২৩.৭০ লাখ টন, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে উন্নীত হয়েছে ১০৬.৮০ লাখ টনে। বর্তমানে দেশে মোট দুগ্ধ উৎপাদনকারী গরু ৮.৬ মিলিয়ন, যার মধ্যে দেশীয় ৪.৫৬ মিলিয়ন (৫৩ শতাংশ) এবং সংকর জাতের ৪.০৪ মিলিয়ন (৪৭ শতাংশ)।

বর্তমানে মাথাপিছু দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ১৭৫ মিলিলিটার। দেশে বছরে ১৫২ লাখ টন দুধের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ১০৬.৮ লাখ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৫২.০২ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে দুধ উৎপাদন হয় ১০৬.৮০ লাখ টন। এ চাহিদা অনুযায়ী সরকার আরও ৪০.২২ লাখ টন দুধ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, মহিষের মাংস ও দুধে কোলেস্টেরলের মাত্রা অন্য প্রাণীর মাংস ও দুধ অপেক্ষা কম, যা স্বাস্থ্যসম্মত। মহিষের দুধে আমিষের পরিমাণ ৪.৫ শতাংশ ও চর্বির পরিমাণ ৭.৫ শতাংশ। মহিষের দুধে অন্য প্রাণির দুধের চেয়ে ৪৩ শতাংশ কোলেস্টেরল কম থাকে। ভিটামিনের পরিমাণও মহিষের দুধে বেশি থাকে। বাণিজ্যিকভাবে মহিষের দুধ ব্যবহার করে দুগ্ধজাত পণ্য তৈরি অনেক লাভজনক, মহিষের দুধে মোট সলিড বেশি থাকায় দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি (দই, ছানা, পনির ইত্যাদি) তৈরিতে গরুর দুধের চেয়ে কম পরিমাণ মহিষের দুধ লাগে।

প্রকাশ : অক্টোবর ২৪, ২০২১ ১:৪২ অপরাহ্ন
মৃত গরু জবাই করে মাংস বিক্রির অভিযোগ
পাঁচমিশালি

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার কলেজবাজারে রমজান নামের স্থানীয় এক কসাইয়ের বিরুদ্ধে মৃত গরু জবাই করে মাংস বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।

অবশেষে আক্কেলপুর পৌরসভার মেয়র ও থানা পুলিশের নির্দেশে তার বিক্রির জন্য বাজারে আনা ওই গরুর মাংস নদীতে ফেলে দিয়েছেন অভিযুক্ত ওই কসাই।

আক্কেলপুর পৌরসভার মেয়র শহীদুল আলম চৌধুরী ও পুলিশ জানান, শুক্রবার ভোরের দিকে অভিযোগে জানতে পারেন যে, কলেজ বাজারে একটি অসুস্থ মৃতপ্রায় গরু নির্ধারিত জবাইদার ছাড়াই (পৌরসভার কর্মচারী) গরুটি জবাই করেন।

ওই সময় ওই গরুর শরীর থেকে নাকি কোনো রক্ত বের হয়নি। এ খবর জানার পর পৌর মেয়র শহীদুল আলম চৌধুরী ও আক্কেলপুর থানার এসআই শাহ আলম ঘটনাস্থলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে কসাই রমজান আলী বিষয়টি স্বীকার করেন।

ভবিষ্যতে এমন অপরাধ আর করবেন না বলে অঙ্গীকার করেন। পরে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে তার ওই গরুর মাংসগুলো পাশের তুলশীগঙ্গা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এ ঘটনার শাস্তি স্বরূপ আগামী সাত দিন কসাই রমজান কোনো হাটবাজারে গরুর মাংস বিক্রি করতে পারবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন পৌর মেয়র।

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

ads

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ads

ফেসবুকে আমাদের দেখুন

ads

মুক্তমঞ্চ

scrolltop